পরীক্ষার আগে হঠাৎ ভয় কেন চেপে ধরে! কেন হয় এমন,জানুন 'পারফরম্যান্স অ্যানজাইটি'র রহস্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
পরীক্ষার আগে কি আপনি ঘাবড়ে যান, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়? এই অনুভূতি অনেক শিক্ষার্থীর জন্য পরিচিত। তবে এটি শুধু "ভয়" নয়; এটি পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি একটি মানসিক অবস্থা যেখানে চাপ, উদ্বেগ এবং ভয় একত্রিত হয়ে শেখার ক্ষমতা ও পরীক্ষার পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করে। গবেষণা দেখিয়েছে, যারা পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত ভয় অনুভব করেন, তাদের মেমোরি ও কনসেনট্রেশন কমে যায়, এবং ফলাফলের ওপর তা প্রভাব ফেলে।
পরীক্ষার ভয়ের কারণসমূহ
১. অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি: যদি সিলেবাস সম্পূর্ণভাবে শেষ না হয় বা প্রস্তুতি কম থাকে, শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস হারায়। "আমি কি সব কিছু জানি?"—এ ধরনের প্রশ্ন মনকে উদ্বিগ্ন করে এবং ভয়ের জন্ম দেয়।
২. অতিরিক্ত চাপ: নিজের উপর বা পরিবার ও সমাজের উচ্চ প্রত্যাশা শিক্ষার্থীর মনকে চাপের মধ্যে রাখে। চাপ থাকলে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা কঠিন হয়ে যায়।
৩. ব্যর্থতার ভয়: "ভুল হলে আমার ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হবে"—এ ধরনের চিন্তা পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটির মূল কারণ। শিক্ষার্থী প্রায়ই ব্যর্থতার ভয়ে নিজের সামর্থ্যকে স্বীকার করতে ভয় পায়, যা মানসিক চাপ বাড়ায়।
৪. নেতিবাচক চিন্তা: পরীক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা বা "প্রশ্ন কঠিন হবে কি?"—এ ধরনের ভাবনা মনকে উদ্বিগ্ন করে। এই চিন্তাগুলো শিক্ষার্থীর ঘুম, মনোযোগ এবং শেখার সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ:
◑ অতিরিক্ত উদ্বেগ, ভয়, অস্থিরতা
◑ হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি, ঘাম বা কমজোরি অনুভূত হওয়া
◑ মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা বা অম্বল অনুভব
◑ ঘুমের সমস্যা বা খাবার খাওয়ার অনিচ্ছা
এই লক্ষণগুলো স্বাভাবিক এবং অনেক শিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষা আগে অনুভব করে। তবে অতিরিক্ত হলে এটি পারফরম্যান্সকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি মোকাবেলার উপায়
১. পর্যাপ্ত প্রস্তুতি: পরীক্ষার আগে একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। ছোট ছোট অংশে পড়া এবং রিভিশন করা মনকে শান্ত রাখে।
২. সময় ব্যবস্থাপনা: পড়া এবং বিরতির জন্য কার্যকর সময়সূচী তৈরি করুন। "ব্রেক নাও, মন স্থির থাকবে"—এটি মানসিক চাপ কমায়।
৩. নেতিবাচক চিন্তা দূর করা: মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং Visualization ব্যবহার করুন। নিজের কল্পনা করুন যে পরীক্ষা ভালোভাবে হচ্ছে—মন ইতিবাচক থাকে।
৪. বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা: নিজে এবং অন্যদের কাছ থেকে যথাযথ প্রত্যাশা রাখুন। অতিরিক্ত চাপ বা নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা ভয় বাড়ায়।
৫. পেশাদার সাহায্য: যদি উদ্বেগ খুব বেশি হয় এবং নিয়ন্ত্রণ হারানো যায়, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পরীক্ষার আগে ভয় অনুভব করা স্বাভাবিক, কিন্তু পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটি অবজ্ঞা করলে তা শিক্ষার্থীর মনোযোগ ও ফলাফলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, সময় ব্যবস্থাপনা, নেতিবাচক চিন্তা নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা পরীক্ষার আগে ভয় কমাতে সাহায্য করে। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নেওয়া শিক্ষার্থীর সফলতা ও আত্মবিশ্বাস নিশ্চিত করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।