অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে যেসব ক্ষতি হতে পারে

অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের বর্তমান জীবনে কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অন্যতম একটি সাধারণ অভ্যাস রাত জাগা। প্রযুক্তির এই যুগে রাত জেগে কাজ করা, পড়াশোনা করা কিংবা বিনোদনে মত্ত থাকা এক দৈনন্দিন ঘটনা। কিন্তু এই অভ্যাসটি আমাদের শরীর ও মনের ওপর কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আমরা প্রায়শই উদাসীন থাকি।

অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রাত জাগা মানুষের আয়ু পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

আসুন জেনে নেই, অতিরিক্ত রাত জাগার ফলে কি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে--

শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রতিদিন রাত জাগলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে ফলে শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়না। অতিরিক্ত রাত জাগা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
রাত জাগার ফলে যেসব শারীরিক ঝুঁকি থাকে--

হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধিঃ রাত জাগার অভ্যাস হৃদপিণ্ডের ওপর মারাত্মক চাপ ফেলে। ঘুমের সময় আমাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে কমে আসে। কিন্তু যখন পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, তখন স্ট্রেস হরমোন যেমন অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তচাপকে দীর্ঘক্ষণ উচ্চ (high) রাখে। এর ফলে হৃদপিণ্ডের পেশি ক্ষয় হতে থাকে এবং হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রাত জাগেন তাদের হার্ট ফেইলিউর, অনিয়মিত হার্টবিট ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকিঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক ৬ ঘণ্টার কম ঘুমায়, তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি থাকে।

ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতাঃ ঘুমের অভাব আমাদের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। একই সাথে, এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন (লেপটিন ও ঘ্রেলিন) প্রভাবিত করে। এর ফলে রাতে অতিরিক্ত খিদে পায় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে, যা পেটে চর্বি জমার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং স্থূলতার কারণ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসঃ ঘুমের সময় শরীর নিজেকে মেরামত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে শরীর সহজেই বিভিন্ন রোগ, যেমন: সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং বিভিন্ন সংক্রমণের শিকার হতে পারে। দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি থাকলে এটি ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।

ত্বকের ক্ষতিঃ রাত জাগা বা কম ঘুম হলে ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন কমে যায়। এর ফলে ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে, অকালে বলিরেখা ও চোখের নিচে কালি দেখা যায়। যা ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।

হজমে সমস্যাঃ অপর্যাপ্ত ঘুম হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এর ফলে পেটে ব্যথা, গ্যাস, বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এটি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS)-এর লক্ষণগুলোও বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও রাত জাগার ফলে শরীরে সবসময় ক্লান্তিভাব থাকে। যা প্রতিদিনকার কাজে বাধাগ্রস্ত করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি রাত জাগার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে।

যেমন-
বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তাঃ ঘুমের অভাব দীর্ঘমেয়াদী বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। রাতের পর রাত জেগে থাকলে মানসিক চাপ বাড়ে, যা মস্তিষ্কের 'ফিল গুড' হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত মনকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলে।

মেজাজ পরিবর্তন ও মনোযোগের অভাবঃ নিয়মিত কম ঘুম হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সামান্য কারণেই মানুষ রেগে যায় বা হতাশ হয়ে পড়ে। এর ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির ওপর চাপ পড়ে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

মানসিক অসুস্থতার বৃদ্ধিঃ মানসিকভাবে অসুস্থ বা কোনো রোগে আক্রান্ত এমন ব্যক্তি পর্যাপ্ত না ঘুমালে ক্রমেই তার অসুস্থতা বৃদ্ধি পাবে। 
রাত জাগার ফলে অনেক সময় রোগীর মধ্যে হ্যালোসিনেশান দেখা দেয়। এমনকি ওই সময়ে অলীকতার ভেতরে থেকে রোগী তার আশেপাশে থাকা ব্যক্তিকে আঘাতও করে ফেলে। 

এছাড়াও রাত জাগলে আমরা ক্রমান্বয়ে মানসিকভাবে দূর্বল হতে থাকি যা আমাদের শরীর ও দৈনন্দিন জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে।


রাত জাগার অভ্যাসটি সাময়িকভাবে আরামদায়ক বা প্রয়োজনীয় মনে হতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এটি শুধু শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে না, বরং আমাদের পেশাগত এবং সামাজিক জীবনকেও ব্যাহত করে। তাই একটি সুস্থ ও কর্মঠ জীবনের জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
মনে রাখতে হবে, আমাদের শরীর একটি জৈবিক ঘড়ি (সার্কাডিয়ান রিদম) অনুযায়ী কাজ করে, এবং এই স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে গেলে তার মূল্য দিতে হয় মারাত্মক স্বাস্থ্যক্ষতির মাধ্যমে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ