লবণাক্ত জমিতে কয়রায় তরমুজ চাষ: লাভ তিন গুণ, সাফল্যের নতুন দিগন্ত

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
খুলনার সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় এখন তরমুজ চাষের জোয়ার। মাঠে মাঠে চলছে ব্যস্ততা—কেউ বীজ রোপণ করছেন, কেউ সার, পানি ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় পতিত জমিগুলোও এবার তরমুজ চাষে সজীব হয়ে উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, আমাদী, চণ্ডীপুর, খিরোল, কিনুকাটি ও হরিনগর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বিলের জমিগুলোতে তরমুজের বীজ রোপণের কাজ চলছে। নারী শ্রমিকেরা বীজ বসিয়ে দিচ্ছেন, আবার কোথাও পানি ছিটানো হচ্ছে। দূরের খাল ও পুকুর থেকে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি আনা হচ্ছে জমিতে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচ বছর আগেও আমন ধান কাটার পর জমি পতিত থাকত। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় অন্য ফসল চাষের চেষ্টা করতেন না কৃষকরা। কিন্তু এখন লবণসহিষ্ণু তরমুজ চাষে সেই জমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ পাওয়ায় তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
আমাদী গ্রামের কৃষক আবিয়ার গাজী বলেন, "গত বছর তরমুজ চাষে ব্যাপক লাভ হয়েছে। অনেক কৃষক বিঘাপ্রতি লাখ টাকার বেশি লাভ করেছেন। এবার আমি নিজেও ৩০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। তবে এবার বীজ, সার ও অন্যান্য খরচ বেশি।"
মৌসুমি শ্রমিকরাও এই চাষাবাদে ব্যস্ত। হরিনগর বিলের এক খেতে কাজ করা মীনাক্ষী মণ্ডল বলেন, "সারা দিন ৪০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। তরমুজ চাষের মৌসুমে আমরা ঘরের কাজ শেষ করে বাড়তি আয় করতে পারি।"
কয়রা উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২০০ হেক্টরে। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, ধান চাষের চেয়ে তরমুজে লাভ বেশি। ধান চাষে পাঁচ মাস সময় লাগে এবং বিঘাপ্রতি লাভ হয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজ চাষে সময় লাগে মাত্র আড়াই মাস, আর বিঘাপ্রতি লাভ হতে পারে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।
মহারাজপুর এলাকার বিলে এবার প্রথমবারের মতো ১২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, "আমন ধান কাটার পর এই বিল পড়ে থাকত। এবার প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করছি। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।"
কয়রা উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গুরুদাশ মণ্ডল বলেন, "কয়রার জমিগুলো লবণাক্ত হওয়ায় আগে শুধু আমন ধান চাষ হতো। এখন লবণসহিষ্ণু তরমুজ চাষে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।"
এভাবে কয়রার লবণাক্ত জমি এখন কৃষকদের জন্য স্বপ্নের ফসল হয়ে উঠেছে। তরমুজ চাষ শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই আনে না, বরং পতিত জমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে।