ভবিষ্যতের ভয়কে জয় করে মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনার উপায়গুলো শিখে নিন এক্ষুনি!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের জীবনে ভয় একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে যখন এই ভয় ভবিষ্যতের অজানা ঘটনা, সম্ভাব্য বিপদ বা অনিশ্চয়তার প্রতি অতিরিক্তভাবে তৈরি হয়, তখন সেটি হয়ে দাঁড়ায় মানসিক শান্তির বড় শত্রু। বিশেষজ্ঞরা একে বলেন "Fear of the Unknown" বা অজানা শঙ্কা। আধুনিক জীবনের দ্রুত পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, চাকরি ও শিক্ষার প্রতিযোগিতা, পারিবারিক চাপ—সব মিলিয়ে এই ভয় এখন বিশ্বব্যাপী কোটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেন এই ভয় সৃষ্টি হয়?
ভবিষ্যৎ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা জানি না সামনে কী ঘটবে। এই অজানা বিষয়গুলোই আমাদের মনে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। গবেষণা বলছে, যারা "Intolerance of Uncertainty" বা অনিশ্চয়তার প্রতি অসহিষ্ণু, তাদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা ও প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা বেশি।
যখন কোনো বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যায় না, তখন মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে শূন্যস্থান পূরণ করে সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনা কল্পনা করে। এই "Worst-case Scenario Thinking" অনেক সময় বাস্তবতার চেয়ে ভয়কে বড় করে তোলে।
অজানা শঙ্কা মস্তিষ্কে কর্টিসলসহ স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ ওঠে, পেশি শক্ত হয়ে যায়। একে বলা হয় "Fight-or-Flight Response"। স্বল্পমেয়াদে এটি শরীরকে সজাগ রাখে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি মানসিক শান্তি ভেঙে দেয়।
অজানা ভয় যেভাবে আমাদের বর্তমানকে নষ্ট করে-
☞ দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব: ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা পড়াশোনা, কাজ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষতি করে।
☞ বর্তমান মুহূর্ত হারিয়ে যাওয়া: আনন্দময় সময়েও মনের ভেতর চিন্তা ঘুরতে থাকে—"এরপর কী হবে?"—যা বর্তমানে মনোযোগ ও সুখ কমিয়ে দেয়।
☞ শারীরিক ক্ষতি: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ঘুমের ব্যাঘাত, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের চিন্তার ধরণই ভয় বাড়ায়। নেতিবাচক অনুমান ও অতিরিক্ত কল্পনা মস্তিষ্ককে বারবার একই ভয়ানক চিত্র আঁকতে বাধ্য করে।
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে ভবিষ্যতের ভয় দিনিন বেড়েই চলেছে। চাকরির অনিশ্চয়তা, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার প্রতিযোগিতা, আর্থিক চাপ, এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনও অনেকের মানসিক শান্তি নষ্ট করছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় মানুষ স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছে—এক মুহূর্তে জীবন বদলে যেতে পারে, আর এই উপলব্ধি এখনো অনেককে অজানা আতঙ্কের মধ্যে রাখছে।
মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনার উপায়-
◑ ভয়কে লিখে রাখা ও বিশ্লেষণ করা: কোন বিষয় আপনাকে অস্থির করছে তা লিখে রাখুন। অনেক সময় লিখলেই দেখা যায়, ভয় বাস্তবের তুলনায় অতিরিক্ত বড় মনে হচ্ছে।
◑ পরিকল্পনা তৈরি করুন: ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা থাকলে অনিশ্চয়তা কমে। যেমন—আর্থিক সঞ্চয়, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা।
◑ শারীরিক ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম: ব্যায়াম এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-স্ট্রেস হরমোন। পর্যাপ্ত ঘুমও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
◑ অপ্রয়োজনীয় কাজ এড়িয়ে চলুন: অতিরিক্ত ঘুম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা সামাজিক মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাটানো ভয়কে বাড়ায়। বরং বই পড়া, সঙ্গীত শোনা বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো মানসিক প্রশান্তি দেয়।
◑ পেশাদার সাহায্য নিন: যদি ভয় ও উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে জীবনে বড় প্রভাব ফেলে, তবে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
ভবিষ্যতের ভয় মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এটি যখন অতিরিক্ত হয় তখন মানসিক শান্তি ও শারীরিক সুস্থতার বড় ক্ষতি করে। অনিশ্চয়তার প্রতি সহনশীলতা তৈরি, পরিকল্পিত জীবনযাপন, মাইন্ডফুলনেস চর্চা এবং প্রয়োজনীয় পেশাদার সাহায্য—এসব মিলিয়েই অজানা শঙ্কাকে জয় করে মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।