ত্বকের ওপেন পোরস নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছেন!! জানুন আসল কারণ ও মুক্তির উপায়

ত্বকের ওপেন পোরস নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছেন!! জানুন আসল কারণ ও মুক্তির উপায়
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়, তার একটি হলো পোরস বা ত্বকের ক্ষুদ্র রোমকূপ। অনেকে মনে করেন পোরস খোলা বা বন্ধ হয়, কিন্তু আসলে বৈজ্ঞানিকভাবে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। পোরস সবসময় খোলা থাকে—এগুলো হলো ক্ষুদ্র ছিদ্র, যেখান দিয়ে ঘাম এবং ত্বকের তেল (sebum) নিঃসৃত হয়। তবে বিভিন্ন কারণে এগুলো বড় বা ছোট দেখাতে পারে, যা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্যকে প্রভাবিত করে।

যেকারণে পোরস বড় মনে হয়

◑ অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ (Sebum Overproduction): অয়েল গ্রন্থি থেকে যখন বেশি তেল নিঃসৃত হয়, তখন তা মিশে যায় মৃত কোষ ও ধুলোবালির সঙ্গে। ফলে পোরসের ভেতর জমাট বাঁধে এবং বাইরের দিক থেকে এগুলো প্রসারিত হয়ে বড় দেখায়। তৈলাক্ত ত্বকের মানুষদের এই সমস্যাটি বেশি হয়।

◑ বয়স বৃদ্ধির প্রভাব:  বয়স বাড়ার সঙ্গে কোলাজেন ও ইলাস্টিন কমে যায়। কোলাজেন কমে গেলে ত্বক ঢিলে হয়, টানটানভাব কমে যায় এবং পোরস স্পষ্টভাবে দেখা দিতে থাকে।

◑ জেনেটিক কারণ: অনেক সময় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো কারও পোরস বড় হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। এটি এক ধরনের inherited trait, যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না।

◑ হরমোনের প্রভাব: বয়ঃসন্ধি, গর্ভাবস্থা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সময় অয়েল গ্রন্থি অত্যধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে পোরসের আকার বড় হয়ে চোখে পড়ে।

◑ পরিবেশগত প্রভাব: ধুলা, ধোঁয়া, দূষণ, মেকআপ বা অপর্যাপ্ত পরিষ্কারের কারণে পোরস আটকে যায়। দীর্ঘ সময় ইউভি রশ্মির প্রভাবে কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পোরসকে আরও স্পষ্ট করে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

ত্বকের পৃষ্ঠের নিচে থাকে sebaceous gland (তেল গ্রন্থি)। এখান থেকে উৎপন্ন তেল চুলের গোড়া ঘিরে পোরস দিয়ে বের হয়। যখন অতিরিক্ত সেবাম ও মৃত কোষ জমে পোরস আটকে যায়, তখন ভেতরের চাপ বেড়ে বাইরের দিকে প্রসারিত হয়। এজন্য পোরসকে বড় মনে হয়, যদিও আসলে এটি "খুলে যায়" না।

পোরস ছোট দেখানোর  উপায়

☞ ক্লিনজিং (Cleaning): দিনে অন্তত দুইবার হালকা ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুতে হবে। অয়েল ও ময়লা দূর হলে পোরস পরিষ্কার থাকবে এবং বড় দেখাবে না।

☞ এক্সফোলিয়েশন (Exfoliation): মৃত কোষ জমা হলে পোরস আটকে যায়। স্যালিসিলিক অ্যাসিড বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে গভীরভাবে পরিষ্কার হয়।

☞ রেটিনয়েড (Retinoids): রেটিনল বা রেটিনয়েড ত্বকের কোষ পুনর্নবীকরণ বাড়ায় এবং কোলাজেন উৎপাদন উদ্দীপিত করে। এতে ত্বক টানটান থাকে এবং পোরস ছোট দেখা যায়।

☞ সানস্ক্রিন ব্যবহার: UV রশ্মি কোলাজেন ভেঙে দেয়, ত্বক ঢিলে হয় এবং পোরস বড় দেখায়। প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এ সমস্যা কমে।

☞ লাইফস্টাইল পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান-অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা—এসব ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে। পর্যাপ্ত পানি খেলে ত্বক আর্দ্র থাকে এবং পোরস কম চোখে পড়ে।

প্রচলিত কিছু ভুল ধারণার খন্ডন

⇨  "পোরস বন্ধ করা যায়" → আসলে পোরস কখনো বন্ধ হয় না, কেবল পরিষ্কার বা টানটান করার মাধ্যমে ছোট দেখানো যায়।

⇨  "বরফ দিয়ে ঘষলে পোরস চিরতরে ছোট হয়ে যায়" → বরফ ত্বকের রক্তনালী অস্থায়ীভাবে সংকুচিত করে, এতে পোরস সাময়িকভাবে ছোট দেখায়।

⇨ "কেবল ব্যয়বহুল পণ্যেই সমাধান" → সঠিক রুটিন ও নিয়মিত যত্ন অনেক সময় ব্যয়বহুল পণ্যের চেয়েও কার্যকর।

ত্বকের পোরস নিয়ে অনেক ভুল ধারণা থাকলেও আসল সত্য হলো এগুলো কখনো বন্ধ বা খোলা হয় না। অতিরিক্ত তেল, বয়স, জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণে পোরস বড় বা চোখে পড়ার মতো হয়। তবে সঠিক যত্ন, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পণ্য, এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চললে পোরস ছোট ও কম দৃশ্যমান রাখা সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ