স্মার্টফোনের স্ক্রিন আপনার শিশুর মস্তিষ্কের গঠনেও পরিবর্তন আনছে! গবেষণার প্রকাশিত নয়া তথ্য

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আজকের শিশুরা জন্মের পর থেকেই ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে বড় হচ্ছে। ২০২৫ সালের একটি বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ লাখেরও বেশি শিশু ও কিশোরের ডেটা বিশ্লেষণ দেখিয়েছে, যারা দিনে ৪ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিনে সময় কাটাচ্ছে, তাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস, ফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং সামাজিক মস্তিষ্কের অংশগুলোতে হ্রাস দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিশুরা বাস্তব জগতের আবেগ, সামাজিক সংযোগ এবং মনোযোগের ক্ষেত্রে দেরিতে বিকশিত হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, "স্ক্রিন টাইম শুধু চোখের জন্য নয়, মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ু সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত করে।"
নতুন গবেষণার তথ্যমতে মস্তিষ্কে প্রভাব -
◑ হিপোক্যাম্পাসের ক্ষতি:
হিপোক্যাম্পাস স্মৃতি, শেখার এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ স্ক্রিন টাইম শিশুদের হিপোক্যাম্পাসের আকার সামান্য ছোট করতে পারে, যা স্মৃতি ও শেখার গতি কমায়।
◑ ফ্রন্টাল কর্টেক্সে প্রভাব:
ফ্রন্টাল কর্টেক্স মনোযোগ, সমস্যা সমাধান ও আত্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম থাকলে শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়।
◑ সামাজিক ও আবেগগত বিকাশ:
শিশুরা বেশি স্ক্রিন ব্যবহার করলে মুখের অভিব্যক্তি বোঝা, সংবেদনশীলতা অনুভব করা এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে সমস্যার সম্মুখীন হয়।
◑ ভাষা শেখার বিলম্ব:
স্ক্রিনে একদিকে ব্যস্ত থাকার কারণে শিশুরা বাস্তব জীবনের কথোপকথনে কম অংশ নেয়। ফলশ্রুতিতে, শব্দভাণ্ডার ও বাক্যগঠন ক্ষমতা দেরিতে বিকশিত হয়।
◑ ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য:
স্ক্রিনের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যা ঘুমের গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক চাপ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা দেখা দেয়।
বয়সভিত্তিক স্ক্রিন সীমা
⇨ ০–২ বছর: সর্বাধিক শূন্য স্ক্রিন (শুধু ভিডিও কল বা জরুরি শিক্ষামূলক অ্যাপ)।
⇨ ৩–৫ বছর: দিনে সর্বাধিক ১ ঘণ্টা শিক্ষামূলক বা অভিভাবকের সাথে স্ক্রিন।
⇨ ৬–১২ বছর: দিনে সর্বাধিক ২ ঘণ্টা। খেলাধুলা ও বাস্তব সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
⇨ ১৩–১৮ বছর: দিনে ২–৩ ঘণ্টা, তবে শারীরিক, সামাজিক এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
গবেষণা দেখায়, এই সীমা অতিক্রম করলে ADHD, আচরণগত সমস্যা, মনোযোগের কমতি এবং সামাজিক দক্ষতায় বিলম্ব দেখা দেয়।
অভিভাবকদের যা করণীয়-
১। শেয়ারড স্ক্রিন অভিজ্ঞতা: শিশুদের সঙ্গে ভিডিও বা শিক্ষামূলক কনটেন্ট দেখা।
২। স্ক্রিন-ফ্রি সময় নিশ্চিত করা: ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে ডিভাইস বন্ধ।
৩। বাহ্যিক ও শারীরিক কার্যক্রম: খেলাধুলা, সৃজনশীল কার্যকলাপ, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক সময়।
৪। ডিভাইস ব্যবহারে নিজেই উদাহরণ সৃষ্টি করা: অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণশীল স্ক্রিন ব্যবহার শিশুদের আচরণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বৈজ্ঞানিক ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ:
ফ্রান্সে শিশুদের জন্য স্ক্রিন ব্যবহারের উপর সরকারী নীতিমালা তৈরি হয়েছে। ১১ বছরের নিচের শিশুদের ফোন ব্যবহার সীমিত করতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী গবেষকরা শিশুদের মস্তিষ্ক ও আচরণগত স্বাস্থ্য রক্ষায় স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণকে জরুরি মনে করছেন।
২০২৫ সালের বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, সঠিক সীমা ছাড়া স্ক্রিন ব্যবহার শিশুর মস্তিষ্ক ও সামাজিক বিকাশকে প্রভাবিত করছে। অভিভাবকদের উচিত সচেতনভাবে স্ক্রিন সময় সীমাবদ্ধ করা, যাতে শিশুদের স্মৃতি, মনোযোগ, সামাজিক দক্ষতা ও ঘুমের মান বজায় থাকে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।