গ্লোবাল অ্যালাইয়েন্স থেকে আর্ন্তজাতিক চাপ-কোন দেশে বাজেট রীতিমতো 'যুদ্ধমুখী'?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে সামরিক খাতে ব্যয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সীমান্ত সংঘাত, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রপ্রযুক্তির প্রতিযোগিতা এসব কারণে দেশগুলো তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে ব্যয় বাড়াচ্ছে। তবে বাজেটের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অংশ যে দেশগুলোতে প্রতিরক্ষা খাতে যায়, সেটি নির্ধারণ করা সহজ নয়। এটি নির্ভর করে দেশের মোট অর্থনৈতিক শক্তি, জিডিপি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং প্রতিরক্ষা নীতির ওপর।
শীর্ষস্থানীয় সামরিক ব্যয়কারী দেশসমূহ
⇨ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ব্যয় এবং মোট বাজেটের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষে। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, মার্কিন সামরিক বাজেট প্রায় ৮৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫%–৪%।
ব্যয় মূলত: অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী, বিশ্বব্যাপী সেনা মোতায়েন, সাইবার নিরাপত্তা ও মহাকাশ প্রযুক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের প্রায় ১৫–২০% সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে যায়।
⇨ চীন (China): সামরিক ব্যয়ে চীনের অবস্থান শীর্ষে। ২০২৩ সালে প্রায় ২৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়। মোট জিডিপির প্রায় ১.৯%–২% সামরিক খাতে ব্যয় হয়।
ব্যয়মূলত: আধুনিক নৌবাহিনী সম্প্রসারণ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক রাডার প্রযুক্তি, সীমান্ত সুরক্ষা এবং হ্যামলারড অঞ্চলে সেনা মোতায়েন
⇨ রাশিয়া (Russia): রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রায় ৮০–৯০ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট বাজেটের প্রায় ৬–৭%। ইউক্রেন–রাশিয়া সংঘাতের কারণে সামরিক ব্যয় আরও বেড়েছে।
ব্যয় মূলত: স্থল ও নৌসেনা শক্তি রক্ষণাবেক্ষণ, আধুনিক ট্যাঙ্ক ও রকেট সিস্টেম, সীমান্ত রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা।
⇨ সৌদি আরব (Saudi Arabia): মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক ব্যয়কারী দেশ। মোট বাজেটের প্রায় ১৫–১৬% প্রতিরক্ষা খাতে যায়, যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
ব্যয় মূলত: আধুনিক বিমানবাহিনী ও ট্যাঙ্ক,প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র, সৈন্য ও প্রশিক্ষণ।
⇨ইসরায়েল (Israel): বিশ্বের মধ্যে একমাত্র দেশ যার মোট বাজেটের প্রায় ২০–২৫% সামরিক খাতে যায়।
ব্যয় প্রধানত: সীমান্ত সুরক্ষা ও রকেট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি, সেনাদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা তত্ত্বাবধান।
⇨ ভারত (India): সামরিক খাতে ব্যয় প্রায় ৭০–৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির প্রায় ২.৫%।
ব্যয় মূলত: সীমান্ত রক্ষা, বিশেষত চীনা ও পাকিস্তানি সীমান্ত,আধুনিক বিমান ও নৌবাহিনী সম্প্রসারণ, রাডার, ড্রোন ও সাইবার নিরাপত্তা।
প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণের প্রক্রিয়া
একটি দেশের সামরিক খাতে ব্যয় প্রধানত জিডিপির অনুপাত হিসেবে হিসাব করা হয়। GDP অনুসারে ব্যয় দেখালে দেশগুলোর তুলনা সহজ হয়।
বাজেটের উদ্দেশ্য-
সামরিক খাতের বাজেট শুধু অস্ত্র কেনা নয়, অন্তর্ভুক্ত:
⇨ সেনাদের বেতন ও স্বাস্থ্যসেবা
⇨ প্রশিক্ষণ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা
⇨ প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন
সামরিক ব্যয় সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড স্পর্শ করেছে। বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয়ের প্রায় ৩৯% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা করা হয়। চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব, ইসরায়েল, ভারত-এসব দেশগুলো বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ বহন করছে।
আধুনিক প্রযুক্তি, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তা, নতুন অস্ত্রপত্র এবং সীমান্ত রক্ষা-এসবই সামরিক ব্যয়ের প্রধান চালিকা শক্তি।
যদিও অনেক দেশ সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে, ইসরায়েল, সৌদি আরব, রাশিয়া, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন দেশ যেখানে বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতে যায়। এই ব্যয় শুধু নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব, প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ এবং ভূ-রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।