ভালোবাসা কেন এত দ্রুত বদলায় - জানেন কি এর সত্যিকারের কারণ!!

ভালোবাসা কেন এত দ্রুত বদলায় - জানেন কি এর সত্যিকারের কারণ!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের বহুগামিতা বা একসঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ ধরে রাখতে অক্ষমতা শুধু নৈতিক বা সামাজিক দুর্বলতার ফল নয়। এটি জৈবিক হরমোন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, জিনগত প্রবণতা, মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা এবং সামাজিক-সংস্কৃতির প্রভাব একসাথে মিলিত হয়ে তৈরি করে। চলুন ধাপে ধাপে দেখি, কেন মানুষ প্রায়শই একগামিতা ধরে রাখতে অক্ষম হয়!

জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ

⇨ ডোপামিন হরমোন: মানুষের মস্তিষ্কের "reward system" নতুন বা উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতায় উত্তেজিত হয়। সম্পর্কের শুরুতে ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ বেশি থাকে, যা সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ ও উত্তেজনা তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডোপামিনের মাত্রা কমে গেলে মানুষ আগের মতো উত্তেজনা অনুভব করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে নতুন বা অন্য সঙ্গী আকর্ষণীয় মনে হয়।

⇨ প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স: প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স মস্তিষ্কের সেই অংশ যা নৈতিক নিয়ন্ত্রণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রলুব্ধি সামলাতে সাহায্য করে। যদি এই অংশের কার্যকারিতা কম থাকে, মানুষ impulse control হারায় এবং বহুগামী আচরণের দিকে ধাবিত হয়।

নিষিদ্ধ জিনিস ও novelty-seeking প্রবণতা মানুষ প্রায়শই নতুন, রহস্যময় বা নিষিদ্ধ কিছুতে আকৃষ্ট হয়। দীর্ঘমেয়াদী একগামী সম্পর্ক রুটিনে পরিণত হলে এই আকর্ষণ বহুগামী আচরণের দিকে ঠেলে দেয়। এ কারণে মানুষ নতুন সম্পর্ক বা রোমান্টিক উত্তেজনা খুঁজতে থাকে।

⇨ জিনগত প্রভাব: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট জিনগত বৈশিষ্ট্য-যেমন high novelty-seeking, risk-taking, বা low impulse control—একগামিতা বজায় রাখতে বাঁধা সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, আমাদের DNA-এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বৈশিষ্ট্যও বহুগামী প্রবণতাকে প্রভাবিত করে।

⇨ জৈবিক দ্বন্দ্ব: জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষদের মধ্যে অসংখ্য সঙ্গীর মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করার প্রবণতা থাকে। এই প্রাকৃতিক drive একগামী সম্পর্কের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

 

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

⇨ সংস্কৃতি ও সামাজিক নীতি: বিভিন্ন সমাজের যৌন সম্পর্কের নিয়ম ভিন্ন। কিছু সমাজ বহুগামীতাকে স্বাভাবিক বলে, আবার কিছু সমাজ একগামিতা উৎসাহ দেয়। সামাজিক নিয়ম এবং পরিবারিক মূল্যবোধ মানুষের আচরণে প্রভাব ফেলে।

⇨সামাজিক স্থিতিশীলতা: একবিবাহ মূলত সামাজিক স্থিতিশীলতা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের নিয়ম, পিতৃতান্ত্রিক যত্ন এবং সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিকশিত হয়েছে। তবে আজকের বৈশ্বিক সংস্কৃতিতে, urban lifestyle এবং স্বাধীনতার চাহিদা বহুগামীতার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।

⇨ সম্পর্কের চাহিদা: মানুষের চাহিদা শুধুই যৌন নয়। তারা মানসিক সমর্থন, ভালোবাসা, ভাগাভাগি এবং সামাজিক সংযোগও খোঁজে। কেউ কেউ এই চাহিদা একাধিক সম্পর্কের মাধ্যমে পূরণ করতে চায়, যা বহুগামী আচরণের দিকে নিয়ে যায়।

 

ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক কারণ:

⇨ ব্যক্তিগত চাহিদা: কিছু মানুষ একাধিক সঙ্গীর কাছ থেকে মানসিক সমর্থন, নতুন অভিজ্ঞতা, আবেগীয় সম্পৃক্ততা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা উপভোগ করতে চায়।

⇨ পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক প্রভাব: পরিবার, বন্ধু, মিডিয়া এবং সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, সামাজিকভাবে বহুগামীতা স্বাভাবিক বা প্রশংসিত মনে হলে, মানুষ সহজেই এই পথে যায়।

⇨ মনস্তাত্ত্বিক অসন্তুষ্টি: যদি একজন ব্যক্তি তার সম্পর্ক থেকে মানসিক স্ফূর্তি না পান, তিনি নতুন অভিজ্ঞতা বা নতুন সঙ্গী খুঁজে নেন। এটি কখনও কখনও বর্তমান সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করে।

 

সম্পর্ক ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ

মানুষের সম্পর্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ কাজ করে। সম্পর্কের একগামিতা বজায় রাখতে হলে প্রয়োজন:

⇨ সচেতনতা ও মাইন্ডফুলনেস: নিজের অনুভূতি ও আকর্ষণকে বোঝা এবং প্রলুব্ধি সামলানো।

⇨ যোগাযোগ ও মানসিক সমর্থন: সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা ও আবেগীয় সংযোগ বজায় রাখা।

⇨ সঙ্গীর প্রতি প্রতিশ্রুতি ও মূল্যবোধ: সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্থাপন।

⇨ সৃজনশীলতা ও সম্পর্কের নবায়ন: সম্পর্ককে নতুনত্বে ভরিয়ে তোলা, রুটিন ভেঙে নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করা।
 

মানুষের বহুগামী হওয়া বা একসঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ ধরে রাখতে অক্ষমতা শুধুমাত্র নৈতিক বা সামাজিক দুর্বলতার ফল নয়। এটি জৈবিক, মানসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফ্যাক্টরের সম্মিলিত ফল।

ডোপামিন হরমোনের পরিবর্তন, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের কার্যকারিতা, novelty-seeking প্রবণতা, জিনগত বৈশিষ্ট্য ও প্রজননমূলক প্রবণতা, সামাজিক সংস্কৃতি, পারিপার্শ্বিক প্রভাব এবং ব্যক্তিগত চাহিদা- এসব মিলিত হয়ে মানুষকে বহুগামী আচরণের দিকে পরিচালিত করে। তবে, সচেতনতা, সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ, মানসিক সমর্থন এবং সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশের মাধ্যমে একগামী সম্পর্ককে শক্তিশালী ও স্থায়ী করা সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ