ফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে জলবায়ুর হানাহানি! কিভাবে ফ্লোরিস্ট্রি রক্ষা করতে পারে জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু?

ফুলের সৌন্দর্যের আড়ালে জলবায়ুর হানাহানি! কিভাবে ফ্লোরিস্ট্রি রক্ষা করতে পারে জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু?
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ফুল মানুষের আবেগ, উৎসব, ভালোবাসা এবং সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। তবে এই সুন্দরতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক বড় পরিবেশগত প্রভাব। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি টন ফুল কাটা, উৎপাদন এবং পরিবহনের কারণে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিমানের মাধ্যমে ফুল পরিবহনের সময় যে কার্বন নিঃসরণ হয়, তা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ক্ষতিকর। এই বাস্তবতার আলোকে নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে "Green Floristry" ধারণা, যা পরিবেশবান্ধব ফুলচাষ ও সজ্জার মাধ্যমে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ফুল শিল্পের অদৃশ্য কার্বন চিহ্ন-

◑ আন্তর্জাতিক পরিবহন: নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া বা কলম্বিয়ার মতো দেশ থেকে ফুল বিমানে আনা হয় ইউরোপ বা আমেরিকার বাজারে। এক কেজি গোলাপ আকাশপথে আনতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, তা একটি ছোট গাড়ির একদিনের জ্বালানির সমান।

◑ কোল্ড স্টোরেজ ও সংরক্ষণ: ফুল যাতে সতেজ থাকে, সেজন্য বিশাল শক্তি খরচ হয় কোল্ড চেইনে। এর প্রতিটি ধাপ জ্বালানি ব্যয় বাড়ায়।

◑ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক: ফুলচাষে প্রচলিত রাসায়নিক ব্যবহার শুধু মাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং পানি দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের হুমকি তৈরি করে।

◑ অতিরিক্ত পানি ব্যবহার: এক ডজন গোলাপ উৎপাদনে গড়ে ১৫০ লিটার পর্যন্ত পানি লাগে-যা খরা প্রবণ অঞ্চলে আরও ভয়াবহ সমস্যা তৈরি করে।
 

"Green Floristry"-টেকসই সমাধান:

১. পরিবেশ দূষণ রোধ: প্রচলিত ফুলচাষে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনা হয়। ফলে মাটি, পানি ও আশেপাশের পরিবেশ বাঁচে দূষণ থেকে।

২. স্থানীয় ফুলের অগ্রাধিকার: স্থানীয় উৎস থেকে ফুল সংগ্রহ করলে আন্তর্জাতিক পরিবহনের প্রয়োজন পড়ে না, যা সরাসরি কার্বন নিঃসরণ কমায়। স্থানীয় কৃষকরাও উপকৃত হন অর্থনৈতিকভাবে।

৩. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা: টেকসই চাষ ও স্বল্প দূরত্বের পরিবহন জলবায়ুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, স্থানীয়ভাবে মৌসুমি ফুল ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত চাপ কমে।

৪. জীববৈচিত্র্য রক্ষা:
রাসায়নিক মুক্ত চাষ পরাগায়নকারী মৌমাছি, প্রজাপতি ও অন্যান্য জীবকে সুরক্ষা দেয়। এতে কৃষি ব্যবস্থাও আরও স্বাস্থ্যকর থাকে।

৫. মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা:
রাসায়নিক মুক্ত ফুল চাষ শ্রমিক ও ভোক্তা উভয়ের জন্যই নিরাপদ। দীর্ঘমেয়াদে এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।

৬. সম্পদের সঠিক ব্যবহার:
গ্রিন ফ্লোরিস্ট্রিতে পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয় এবং অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য কমানো হয়। ফুল সাজানোর পর প্লাস্টিক ফোম বা কৃত্রিম উপকরণ বাদ দিয়ে প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।

 

ফুলের জীবনচক্রে টেকসই ভাবনা-

"Green Floristry" কেবল ফুল উৎপাদনে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রতিটি ধাপে-চাষ, কাটা, পরিবহন, সজ্জা থেকে শুরু করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা জরুরি। যেমন, ফেলে দেওয়া ফুল কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যা আবার মাটির উর্বরতা বাড়ায়।

 

কেন এখনই প্রয়োজন?

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের এই সংকটময় সময়ে আমাদের প্রতিটি খাতকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে। ফুল শিল্পকে "নিরীহ সৌন্দর্যের খাত" ভেবে উপেক্ষা করা যাবে না। বরং সৌন্দর্যের সাথে দায়িত্বশীলতা যুক্ত করতে হবে।


ফুল কেবল আবেগের বাহক নয়, এটি অর্থনীতিরও অংশ। কিন্তু এই অর্থনীতি যদি প্রকৃতির ক্ষতির বিনিময়ে দাঁড় করানো হয়, তবে সেই সৌন্দর্যের কোনো মানে থাকে না। তাই "Green Floristry" শুধু একটি ট্রেন্ড নয়, বরং আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এক অপরিহার্য পথ। সৌন্দর্যের সাথে পরিবেশকে বাঁচানোর এই ভারসাম্যই পারে পৃথিবীকে সত্যিকার অর্থে এক "healthier planet" উপহার দিতে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ