মনোযোগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা? কেবল শিশুদের নয়, বড়দের জীবনেও চ্যালেঞ্জ

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার বা এডিএইচডি (ADHD) হলো একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল বা স্নায়ুবিক বিকাশজনিত অবস্থা। এটি মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি চিহ্নিত হলেও অনেক প্রাপ্তবয়স্কও এ সমস্যার ভেতর দিয়ে যান। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অমনোযোগিতা, অতিচঞ্চলতা ও আবেগপ্রবণতা, যা ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ, পড়াশোনা, সামাজিক সম্পর্ক এমনকি কর্মজীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এডিএইচডির লক্ষণ: (তিনটি প্রধান রূপ)
১. অমনোযোগিতা (Inattention): কোনো কাজ দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ দিয়ে করা কঠিন হয়ে যায়। এছাড়া সহজেই মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া, কাজ অসম্পূর্ণ রেখে দেওয়া, নিয়মিত জিনিস হারিয়ে ফেলা বা ভুলে যাওয়াও ঘটে।
২. অতিচঞ্চলতা (Hyperactivity): স্থিরভাবে বসে থাকতে না পারা, অযথা দৌড়াদৌড়ি বা অঙ্গভঙ্গি করা, অতি কথা বলা, পরিবেশ অনুযায়ী আচরণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা।
৩. আবেগপ্রবণতা (Impulsivity): হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া, অন্যের কথা মাঝপথে কেটে দেওয়া, পরিণতি না ভেবে কাজ শুরু করা।
এই তিনটি বৈশিষ্ট্য একই সঙ্গে সবার মধ্যে দেখা দেয় না। কারও ক্ষেত্রে অমনোযোগিতা বেশি হয়, কারও ক্ষেত্রে অতিচঞ্চলতা বা আবেগপ্রবণতা।
এডিএইচডির সম্ভাব্য কারণ: বিজ্ঞানীরা একে একক কারণে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তবে গবেষণায় দেখা যায়-
◑ জেনেটিক কারণ: পরিবারে যদি এডিএইচডি থাকে, ঝুঁকি বাড়ে।
◑ গর্ভকালীন সমস্যা: মায়ের ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ, বা অপুষ্টি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।
◑ জন্মকালীন জটিলতা: অকালে জন্ম নেওয়া বা প্রসবজনিত সমস্যা স্নায়ুবিক ঝুঁকি বাড়ায়।
◑ বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শ: সীসা বা অন্যান্য নিউরোটক্সিন শিশুর স্নায়ুবিক বিকাশে বাধা দেয়।
◑ মস্তিষ্কে আঘাত: জীবনের কোনো পর্যায়ে মস্তিষ্কের ক্ষতিও আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশু বনাম প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আঢড:
শিশুদের ক্ষেত্রে,পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি, অতিরিক্ত চঞ্চলতা, নিয়ম না মানা ইত্যাদি সাধারণ লক্ষণ।
আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, দায়িত্ব পালনে অসুবিধা, মানসিক চাপ ও সম্পর্কের টানাপোড়েন বেশি দেখা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-বয়স বাড়ার সঙ্গে অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও, এটি পুরোপুরি মিলিয়ে যায় না।
চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা: এডিএইচডি দীর্ঘস্থায়ী হলেও সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব-
১. আচরণগত থেরাপি (Behavioral Therapy):
শিশুদের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক আচরণ শেখানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কাজের পরিকল্পনা ও মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল শেখানো হয়।
২. ঔষধি চিকিৎসা: কিছু ক্ষেত্রে স্নায়ু উত্তেজক ওষুধ মনোযোগ ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে ওষুধ সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।
৩. শিক্ষা ও পরিবেশভিত্তিক সহায়তা: স্কুল বা কর্মস্থলে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা দরকার। ছোট ছোট কাজ ভাগ করে দেওয়া, সময় মেনে চলতে সহায়তা করা।
৪. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ।
কেন সচেতনতা জরুরি?
এডিএইচডি নিয়ে সমাজে এখনো অনেক ভুল ধারণা আছে। অনেকেই একে "অমনোযোগী" বা "দুষ্টু" শিশুর স্বভাব ভেবে উপেক্ষা করেন। কিন্তু এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত স্নায়ুবিক অবস্থা। সঠিক সময়ে নির্ণয় ও চিকিৎসা না পেলে এটি শিক্ষাজীবন, পেশাজীবন ও মানসিক স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
এডিএইচডি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের বিকাশজনিত একটি ভিন্নতা। সঠিক সহায়তা পেলে একজন ADHD আক্রান্ত ব্যক্তি সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী চিন্তা ও অনন্য কর্মক্ষমতার মাধ্যমে সফল জীবন গড়তে পারেন। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।