ফ্রি জীবন, ফ্রি সবকিছু, তবুও কাজের আবেগ-জানুন এই দেশের অবাক করা বাস্তবতা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ভাবুন তো একটি দেশে আপনি অসুস্থ হলে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন, সন্তান স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করবে কোনো টিউশন ফি ছাড়াই, বেকার হলে সরকার আপনাকে ভাতা দেবে, এমনকি বার্ধক্যে জীবন চালাতে হবে না দুশ্চিন্তায় কারণ পেনশনও নিশ্চিত। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, পৃথিবীর কিছু দেশে এটাই বাস্তব।
তাহলে প্রশ্ন জাগে-যেখানে জীবনের বড় বড় খরচ নেই বললেই চলে, সেখানে মানুষ কেন এখনও প্রতিদিন সকালে কাজে যায়? উত্তর লুকিয়ে আছে মানুষের মনস্তত্ত্ব আর সমাজব্যবস্থার ভেতরে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, মৌলিক চাহিদা মিটে গেলে কাজের উদ্দেশ্য বদলে যায়। কাজ তখন কেবল "পেটের দায়" নয়, বরং "নিজেকে গড়া" আর "সমাজে অবদান রাখার" মাধ্যম হয়ে ওঠে। নর্ডিক দেশগুলোতে (যেমন সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড) মানুষ জানে-চাকরি হারালেও তারা পথে বসবে না। এই নিরাপত্তা তাদের মানসিক চাপ কমায়, আর কর্মক্ষেত্রে আরও মনোযোগী ও সৃজনশীল করে তোলে।
এমন দেশে আয়কর তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন-মানুষ এত কর দিয়ে খুশি থাকে কীভাবে? আসলে নাগরিকরা জানেন, তাদের টাকাই আবার সমাজের কল্যাণে ফিরছে। একদিকে কর দিয়ে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন-অন্যদিকে এগুলো আবার তাদের জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত করছে। ফলে মানুষ কাজকে বোঝা নয়, বরং একধরনের সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কাজ কেবল আয়ের উৎস নয়; এটি মানুষের পরিচয় ও মর্যাদার প্রতীক। শিক্ষক, প্রকৌশলী, ডাক্তার, শিল্পী কিংবা শ্রমিক-সবাই তাদের পেশার ভেতরে একধরনের গর্ব খুঁজে পান। আর সেই গর্বই মানুষকে প্রতিদিন নতুন করে কাজে ফিরিয়ে আনে।
অনেকে মনে করেন, সবকিছু যদি ফ্রি হয়ে যায় তবে মানুষ নিশ্চয়ই অলস হয়ে যাবে। বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। গবেষণা বলছে, এসব দেশে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বিশ্বের সেরা। এর বড় কারণ-তারা কাজকে কেবল টাকার জন্য নয়, বরং জীবনের আনন্দ ও আত্মতৃপ্তির জন্য করে।
ফলে দেখা যায়, অর্থনীতির এই বিস্ময়কর নিয়মে প্রমাণিত-মানুষ কেবল বেঁচে থাকার জন্য কাজ করে না; কাজই মানুষের বেঁচে থাকার মানে তৈরি করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।