অদৃশ্য এক হুমকির মুখে মানবদেহ! খাওয়া, শ্বাস বা ত্বক- শরীরে ঢুকছে প্রতিটি পথেই!

অদৃশ্য এক হুমকির মুখে মানবদেহ! খাওয়া, শ্বাস বা ত্বক- শরীরে ঢুকছে  প্রতিটি পথেই!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের জীবনে এতটাই গভীরভাবে প্রবেশ করেছে যে, এখন তা অদৃশ্য রূপে আমাদের শরীরের ভেতরে ঢুকছে—মাইক্রোপ্লাস্টিক আকারে। ব্যাগ, বোতল, প্যাকেজিং, পোশাক থেকে শুরু করে প্রসাধনী প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এই প্লাস্টিক ভেঙে অতি ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়, যা আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও শ্বাস, খাবার, পানি এমনকি ত্বকের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করছি। বৈজ্ঞানিকভাবে এগুলোকে "মাইক্রোপ্লাস্টিক" বলা হয়, যার আকার ৫ মিলিমিটারেরও কম। ছোট হলেও এদের প্রভাব ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী।

কীভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করছে?

১। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে- আমরা প্রতিদিন যে বাতাসে শ্বাস নিই, তাতে শুধু ধুলোবালি নয়, প্লাস্টিক কণাও মিশে থাকে। সিন্থেটিক পোশাক, আসবাবপত্র, কার্পেট, এমনকি ঘরের ভেতরের সাধারণ ধুলো থেকেও মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপন্ন হয়। এগুলো ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রের ওপর ধীরে ধীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

২। খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে- আমাদের টেবিলে আসা খাবারও নিরাপদ নয়। লবণ, মধু, মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য এমনকি বোতলজাত পানীয়েও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেট বা মোড়ক থেকে ক্ষুদ্র কণা আলাদা হয়ে খাবারের সাথে শরীরে প্রবেশ করছে।

৩। ত্বকের মাধ্যমে- প্রসাধন সামগ্রীর ভেতরেও প্লাস্টিক কণা থাকে। অনেক সানস্ক্রিন, ফেসওয়াশ, ডিওডোরেন্ট ও স্ক্রাবারে থাকা মাইক্রোবিড আসলে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক। এগুলো নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের ছিদ্র দিয়ে শরীরে ঢুকে যেতে পারে।
 

মাইক্রোপ্লাস্টিকের ভয়াবহ ক্ষতি-

⇨ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রক্তে প্রবেশ: গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু পাকস্থলীতেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি রক্তপ্রবাহে মিশে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ—যেমন মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি এমনকি হৃদযন্ত্রেও পৌঁছে যায়।

⇨ কোষ ও জিনে প্রভাব: প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কোষের ক্ষতি করে, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং জিনের কার্যকারিতায় পরিবর্তন আনতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সার, স্নায়বিক ব্যাধি ও ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

⇨ বার্ধক্য ও অঙ্গহানি: বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানবদেহের প্রতিরোধক্ষমতা কমতে থাকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক কোষে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা দ্রুত বার্ধক্য আনে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। ফলে বয়স্ক ও অসুস্থরা এর প্রভাবে আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

⇨ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকি:
মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু টক্সিন বহন করে না, ব্যাকটেরিয়ার জন্যও একধরনের বাহক হিসেবে কাজ করে। এ কারণে শরীরে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, বিশেষত ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।
 

কেন এখনই সচেতন হওয়া জরুরি?

মাইক্রোপ্লাস্টিকের হুমকি নিছক পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি এখন মানবস্বাস্থ্যের জন্য এক অনিবার্য সংকট। যদিও এর সম্পূর্ণ প্রভাব এখনও গবেষণাধীন, তবুও বিদ্যমান তথ্য প্রমাণ করছে যে আমরা ধীরে ধীরে এক অদৃশ্য বিষের সঞ্চয়ে ডুবে যাচ্ছি।
 

যেভাবে ঝুঁকি কমানো যায়-

◑ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক কমানো।

◑ বোতলজাত পানি বা খাবারের পরিবর্তে টেকসই বিকল্প ব্যবহার।

◑ ঘরে ধুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রাকৃতিক ফাইবারের পোশাক বেছে নেওয়া।

◑ পরিবেশবান্ধব প্রসাধনী ব্যবহার।

◑ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও প্লাস্টিকমুক্ত উপকরণে অভ্যস্ত হওয়া।
 

প্রতিদিনের জীবনযাপনের সাথে যুক্ত ছোট ছোট সিদ্ধান্তই মাইক্রোপ্লাস্টিক সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে। প্লাস্টিক কমানো মানে শুধু পরিবেশকে রক্ষা করা নয়, নিজের দেহকেও অদৃশ্য এক ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো। আজকের সচেতনতা ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ