সুলাইমান (আ.)–এর সেই রহস্যময় দোয়া, যা রাজত্বের সীমা ছাড়িয়ে আল্লাহর অসীম বরকতের দ্বার খুলে দেয়!

সুলাইমান (আ.)–এর সেই রহস্যময় দোয়া, যা রাজত্বের সীমা ছাড়িয়ে আল্লাহর অসীম বরকতের দ্বার খুলে দেয়!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ইতিহাসে এমন অনেক রাজা–বাদশাহ ছিলেন, যারা পৃথিবী জয় করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁদের রাজত্ব টিকেছিল কেবল নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত তাঁরা সবাই মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়েছেন। অথচ কোরআন আমাদের জানায় এক নবীর কথা-যিনি কোনো সাধারণ রাজা নন, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া ব্যতিক্রমী ক্ষমতার অধিকারী। তিনি নবী সুলাইমান (আ.)। তাঁর সেই বিখ্যাত দোয়া-"রাব্বি হাবলি মুলকান লা ইয়ামবাগী লি আহাদিম মিম্বা'দি"- ছিল শুধু রাজত্বের প্রার্থনা নয়, বরং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিনয়ের প্রতিফলন।

সুলাইমান (আ.)–এর দোয়ার অর্থ ও তাৎপর্য:

কোরআনের সুরা সাদে (আয়াত ৩৫) উল্লেখ রয়েছে-
"হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করো এবং এমন এক রাজ্য দাও, যা আমার পর আর কারো জন্য উপযুক্ত হবে না। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।"

এই দোয়া প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহর কাছে দোয়া করার আগে বান্দার কর্তব্য হলো বিনয়ী হয়ে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা। এরপর আসে বিশেষ অনুরোধ-রাজত্বের এমন শক্তি, যা অন্য কারো জন্য হবে অযোগ্য।
 

আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য অনুগ্রহ:

আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করে দিলেন এবং তাঁকে এমন কিছু ক্ষমতা দান করলেন যা মানবজাতির ইতিহাসে একমাত্র তাঁর জন্য নির্ধারিত হয়ে গেল—

☞ বাতাসের নিয়ন্ত্রণ: তিনি বাতাসকে বাহন বানিয়ে মুহূর্তে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতেন। এটি ছিল এক প্রকার "প্রাকৃতিক পরিবহন ব্যবস্থা" যে ক্ষমতা আর কাউকে দেয়া হয়নি। 

☞ জ্বীনদের অধীনতা: স্থপতি জ্বীনরা তাঁর প্রাসাদ নির্মাণ করত, ডুবুরি জ্বীনরা গভীর সমুদ্র থেকে মুক্তা-রত্ন সংগ্রহ করত। আবার অনেক জ্বীনকে তিনি শিকলবন্দী অবস্থায় রাখতেন।

☞ অসীম রাজ্য: তাঁর রাজত্বে পশু-পাখিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোরআনে হুদহুদ পাখির কাহিনি এর প্রমাণ। প্রাণীদের ভাষা বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন।
 

হাদিসে সুলাইমান (আ.)–এর দোয়ার বিশেষত্ব:

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে-রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাজের সময় এক দুষ্ট জ্বীনকে ধরে ফেলেছিলেন। তিনি প্রথমে চেয়েছিলেন সেটিকে মসজিদের এক স্তম্ভে বেঁধে রাখতে, যেন সবাই তা দেখতে পায়। কিন্তু তখন তাঁর মনে পড়ে যায় সুলাইমান (আ.)–এর সেই দোয়া। তিনি বুঝলেন, এমন ক্ষমতা কেবল সুলাইমান (আ.)–এর জন্য আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। তাই তিনি জ্বীনটিকে ছেড়ে দিলেন।
এটি প্রমাণ করে, সেই দোয়া একেবারেই বিশেষ এবং এর প্রতিফল কেবল সুলাইমান (আ.)–এর জীবনে সীমাবদ্ধ।
 

সুলাইমান (আ.)–এর দোয়ায় আমরা দেখি আল্লাহর ক্ষমতার একটি বিশেষ দিক। তবে আল্লাহ কোরআনে আমাদের জন্য আরও একটি দোয়া শিখিয়েছেন, যা প্রতিটি মানুষ পড়তে পারে-
"রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও, ওয়াকিনা আযাবান্নার।" (সুরা বাকারা: ২০১)
 

এই দোয়ায় দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ একসঙ্গে চাওয়া হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জীবনের ভারসাম্য তৈরি করে।
 

শিক্ষা ও সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা-

◑ শক্তির সীমারেখা: সুলাইমান (আ.) প্রমাণ করেছেন, সীমাহীন শক্তি পেলেও সেটি মানুষের ইচ্ছায় নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছায় সীমিত থাকে।

◑ বিনয়ের গুরুত্ব: ক্ষমতার আগে ক্ষমা চাওয়া আমাদের শেখায়-আত্মশুদ্ধি ছাড়া প্রকৃত কল্যান টেকসই হয় না।

◑ মানবতার কল্যাণ: তাঁর রাজত্ব শুধু ক্ষমতার প্রদর্শন নয়, বরং মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়েছিল। জ্বীনদের তিনি প্রাসাদ নির্মাণ ও সম্পদ আহরণের কাজে লাগাতেন, যা সমাজের উন্নয়নে ব্যবহৃত হতো।
 

নবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া কেবল একটি প্রার্থনা নয়, বরং আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর সম্পর্কের প্রতিফল। এতে আমরা দেখি-ক্ষমতা, রাজত্ব কিংবা নিয়ন্ত্রণ সবই আল্লাহর অনুগ্রহের অংশ। এগুলো কোনো মানুষ নিজের যোগ্যতায় অর্জন করতে পারে না। তাঁর দোয়া আমাদের শেখায়-শক্তির আসল মালিক আল্লাহ, আর মানুষের করণীয় হলো বিনয়, ধৈর্য ও আল্লাহর উপর নির্ভরতা।
আজকের দিনে যখন মানুষ ক্ষমতা ও সম্পদের পেছনে অন্ধভাবে ছুটছে, তখন সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়-অবিনশ্বর শক্তি কেবল আল্লাহর কাছেই, আর প্রকৃত সাফল্য হলো দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্য রক্ষা করা।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ