সমুদ্রতলে ছুটে চলেছে আপনার ইনবক্সের বার্তা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আপনি যখন ভিডিও কল করছেন, মেসেজ পাঠাচ্ছেন বা ছবি আপলোড করছেন, কখনও কি ভেবেছেন, এই ডেটা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কেমন করে পৌঁছায়? এর উত্তর রয়েছে সমুদ্রের তল দিয়ে স্থাপিত সাবমেরিন ফাইবার অপটিক কেবলগুলোতে।
এই কেবলগুলো মাইলের পর মাইল সমুদ্র পেরিয়ে আলোর স্পন্দনের মতো ডেটা বহন করে, যা মহাদেশগুলোকে সংযুক্ত রাখে এবং আমাদের আধুনিক ইন্টারনেট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখে। স্যাটেলাইটের তুলনায় এগুলো অত্যন্ত দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং বৃহৎ ডেটা স্থানান্তরের ক্ষমতাসম্পন্ন, যদিও সাধারণ মানুষের নজরের বাইরে থাকে।
সাবমেরিন যেবল কীভাবে কাজ করে-
⇨ ফাইবার অপটিক প্রযুক্তি: কেবলের ভেতরে অত্যন্ত পাতলা ফাইবার অপটিক তার থাকে। এই তারের মাধ্যমে ডেটা লেজার আলোর স্পন্দনের মতো প্রবাহিত হয়।
⇨ আলোর গতিতে ট্রান্সমিশন: ডেটা প্রায় আলোর গতির সমান গতিতে কেবল ধরে চলে, যা এক দেশ থেকে অন্য দেশে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছায়।
⇨ পুনরাবৃত্তিকারক: সমুদ্রের গভীরতার কারণে আলোর সংকেত দুর্বল হতে পারে।
কেবলের মধ্যে নিয়মিত দূরত্বে রিপিটার বসানো থাকে, যা সংকেতকে শক্তিশালী করে পরবর্তী অংশে পাঠায়।
⇨ মহাদেশীয় সংযোগ: এই কেবলগুলো সমুদ্রের তল দিয়ে মহাদেশগুলোকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে, ফলে ডেটা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে ছড়ায়।
স্যাটেলাইটের তুলনায় সাবমেরিন কেবল:
স্যাটেলাইট ব্যবহার করলে ডেটা ৩৬,০০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে, তাই পৌঁছতে বেশি সময় লাগে।
কিন্তু সাবমেরিন কেবলগুলো সরাসরি মহাদেশের তলে দিয়ে যায়, তাই ডেটার লেটেন্সি কম হয় এবং দ্রুত সংযোগ সম্ভব হয়। বিশ্বের ৯০% এর বেশি আন্তর্জাতিক ডেটা এই কেবলগুলোই বহন করে।
সুবিধা:
১। দ্রুত ডেটা স্থানান্তর: মিলিসেকেন্ডে বিশ্বজুড়ে পৌঁছায়।
২। উচ্চ নির্ভরযোগ্যতা: স্যাটেলাইটের তুলনায় স্থিতিশীল সংযোগ।
৩। বৃহৎ ডেটা বহন সক্ষমতা: হাজার হাজার গিগাবাইট একসাথে পাঠানো যায়।
৪। কম লেটেন্সি: ভিডিও কল, গেমিং ও লাইভ স্ট্রিমিংয়ে উপযুক্ত।
৫। গ্লোবাল সংযোগের মেরুদণ্ড: বিশ্বের ৯০% আন্তর্জাতিক ডেটা বহন করে।
সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি:
১। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি: ভূমিকম্প, সুনামি বা শক্তিশালী ঝড়ের কারণে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২। মানবসৃষ্ট ক্ষতি: জাহাজের নেট বা নৌযানের কারণে কেবল চেরা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
৩। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ: সমুদ্রের গভীরতায় কেবল ঠিক করা বা রিপেয়ার করা খুব ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তিগতভাবে জটিল।
৪। নিরাপত্তা ঝুঁকি: হ্যাকিং বা শত্রু দেশ দ্বারা কেবল ধ্বংস বা মনিপুলেশন ঘটানো যায়, যা গ্লোবাল ইন্টারনেট সিস্টেমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
৫। সীমিত স্থাপনযোগ্য স্থান: সমুদ্রের তল, গভীর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে কেবল বসানো কঠিন, যা সংযোগ নেটওয়ার্ককে কিছু নির্দিষ্ট রুটে সীমাবদ্ধ করে।
আমাদের দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার প্রায় সম্পূর্ণভাবে সমুদ্রের তল দিয়ে চলে, যা অনেকেরই অজানা।এটি গ্লোবাল কমিউনিকেশন, অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক সংযোগের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেবল নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং দূর্ঘটনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যখনই আপনি "সেন্ড" বা "আপলোড" বাটনে চাপেন, তখন আপনার ডেটা মাইলের পর মাইল সমুদ্র পেরিয়ে আলোর মতো স্পন্দনে ছুটে যায়, কেবল এবং রিপিটারগুলোর এক জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। সমুদ্রের নিচের এই কেবলগুলো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড, যা আমাদের যোগাযোগ, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং সামাজিক সংযোগকে গতিশীল রাখে। তাই পরবর্তীবার আপনি ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যে ছবি বা ভিডিও পাঠাচ্ছেন, ভাবুন—ডেটা সমুদ্রের তল দিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করছে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।