আপনি কি ছোট ছোট জিনিসও ভুলে যাচ্ছেন? হঠাৎ রাগ, ভয় বা হতাশা অনুভব করছেন?-হতে পারে এটি ডিমেনশিয়ার সতর্ক সংকেত!

আপনি কি ছোট ছোট জিনিসও ভুলে যাচ্ছেন? হঠাৎ রাগ, ভয় বা হতাশা অনুভব করছেন?-হতে পারে এটি ডিমেনশিয়ার সতর্ক সংকেত!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো স্মৃতি। কল্পনা করুন, যদি একে একে হারিয়ে যায় প্রিয় মুখের নাম, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কিংবা প্রতিদিনের সহজতম কাজ করার ক্ষমতা?

এভাবেই ডিমেনশিয়া ধীরে ধীরে গ্রাস করে একজন মানুষকে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির পরও এই ব্যাধি আজ বিশ্বজুড়ে নীরব মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এটি শুধু একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, বরং পরিবার, সমাজ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও এক জটিল সংকট।
 

মূল বৈশিষ্ট্য:

ডিমেনশিয়া কোনো নির্দিষ্ট রোগ নয়, বরং এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলো—

◑ স্মৃতিশক্তি হারানো: নাম, তারিখ বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মনে না রাখা।

◑ চিন্তা ও বিচারবুদ্ধির দুর্বলতা: পরিকল্পনা, সমস্যা সমাধান ও সংগঠিত হওয়ায় অসুবিধা।

◑ যোগাযোগের সমস্যা: সঠিক শব্দ খুঁজে পেতে বা অন্যের কথা বুঝতে সমস্যা।

◑ আচরণ ও আবেগের পরিবর্তন: হঠাৎ রাগ, ভয়, উদাসীনতা বা হতাশা।

◑ দৃষ্টি ও স্থানীয় বোধের সমস্যা: অনেকের ক্ষেত্রে চোখ ও মস্তিষ্কের সমন্বয় ব্যাহত হয়।
 

কারণ ও প্রকারভেদ:

ডিমেনশিয়ার প্রধান কারণ হলো-

⇨ আলঝেইমারস ডিজিজ: সব ডিমেনশিয়ার ৬০–৭০% ক্ষেত্রেই এ রোগ দায়ী।

⇨ ভাসকুলার ডিমেনশিয়া: মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের সমস্যা বা স্ট্রোকের কারণে ঘটে।

⇨ অন্যান্য কারণ: মস্তিষ্কে আঘাত (Traumatic Brain Injury)লিউই বডি ডিমেনশিয়া (অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা),ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া (মস্তিষ্কের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত), ভিটামিনের ঘাটতি, থাইরয়েড সমস্যা বা দীর্ঘদিন অ্যালকোহল সেবন।
 

ঝুঁকির কারণ:

◑ বয়স: ৬৫ বছরের পর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে।

◑ বংশগত প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণ যুক্ত থাকে।

◑ জীবনযাত্রা: ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা।

◑ মানসিক চাপ: দীর্ঘ একাকীত্ব, বিষণ্নতা বা মানসিক চাপ।
 

বৈশ্বিক প্রভাব:
ডিমেনশিয়া শুধু ব্যক্তিগত ভোগান্তি নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। রোগীরা স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারান, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। পরিবারকে বহন করতে হয় মানসিক ও আর্থিক চাপ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বে ৫৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৩৯ মিলিয়নে।
 

করণীয় ও প্রতিরোধ:

ডিমেনশিয়া নিরাময়যোগ্য নয়, তবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব-

⇨ প্রাথমিক সনাক্তকরণ: লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ।

⇨ সুস্থ জীবনযাপন: ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও সুষম খাদ্য (বিশেষত মেডিটারেনিয়ান ডায়েট)।

⇨ মানসিক কার্যকলাপ: বই পড়া, ধাঁধা সমাধান, নতুন কিছু শেখা।

⇨ ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ: রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।

⇨ সামাজিক সম্পৃক্ততা: পরিবার, বন্ধু ও সমাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা।
 

ডিমেনশিয়া যেন স্মৃতির আস্তে আস্তে মুছে যাওয়া অধ্যায়-যেখানে একদিন নিজের নাম, প্রিয়জনের মুখ বা শৈশবের সোনালি স্মৃতিও অপরিচিত হয়ে পড়ে। আক্রান্তরা ধীরে ধীরে নিজেদের হারাতে থাকেন, আর পরিবার-পরিজনরা প্রতিদিনই মানসিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই-সুস্থ জীবনযাপন, সচেতনতা এবং দ্রুত সনাক্তকরণ রোগটির অগ্রগতি অনেকটা ধীর করতে পারে। শেষ পর্যন্ত, ডিমেনশিয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্মৃতি কেবল ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের মূলভিত্তি। আর সেই ভিত্তি রক্ষাই আজকের মানবতার বড় চ্যালেঞ্জ।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ