ভারতকে ট্রানজিট বানিয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশঃ নেপথ্যে আওয়ামী নেতা

ভারতকে ট্রানজিট বানিয়ে পাচার হচ্ছে বাংলাদেশের ইলিশঃ নেপথ্যে আওয়ামী নেতা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বাজারে নিয়মিতই পাওয়া যাচ্ছে পদ্মার ইলিশ। এসব ইলিশ সরাসরি বাংলাদেশ থেকে না এসে ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে পাচার হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের লাইসেন্স, আর নেপথ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ও ভারতের শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা বুকিত বিনতাংয়ে বাংলাদেশি খাবারের হোটেলগুলোতে প্রায় সারা বছরই পদ্মার ইলিশ পাওয়া যায়। নাম অপ্রকাশের শর্তে সেখানকার এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ইলিশ সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আসে না। এটি ফ্রোজেন অবস্থায় ভারত থেকে আসে এবং ভারতীয় লাইসেন্সে রপ্তানি হয়। তবে মূল চুক্তি হয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে।

একই চিত্র দেখা গেছে সিঙ্গাপুরের মোস্তফা এলাকার বাঙালি হোটেলগুলোতে। সেখানেও বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশ ভারত হয়ে যায়। সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বরিশালের ইলিয়াস সরদার জানান, তারা কেজি সাইজের ইলিশ ৫০-৬০ ডলারে কেনেন, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬-৭ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে কলকাতার হাওড়া-পাতিপুকুরসহ মাছবাজারের একাধিক মাছ ব্যবসায়ী জানান, এই পাচার বহু বছর ধরেই চলছে। ভারতে পূজা উপলক্ষে বছরে একবার ইলিশ রপ্তানি করা হলেও, বাকি সময় চোরাই পথেই আসে বাংলাদেশের ইলিশ। এর প্রায় ৮০ শতাংশ আবার ভারত থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি হয়। বিদেশি ক্রেতা এবং দর-দামও ঠিক করেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা, মাঝখানে শুধু ভারতীয় লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়।

এই অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যার সঙ্গে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, যেসব বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ভারতে ইলিশ রপ্তানি করেন, তাদের অনেকেরই কলকাতায় নিজস্ব বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায় এই সিন্ডিকেটের অন্যতম কারিগর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। ইলিশ রপ্তানিতে তার চারটি লাইসেন্স রয়েছে। ৫ আগস্ট,২০২৪ এর পর ভারতে পালিয়ে গিয়েও ( টুটুল গতবছর ভারত পালানোর সময় গ্রেফতার হলেও বর্তমানে ভারতেই অবস্থান করছে বলে জানা যায়) বাংলাদেশের ব্যবসা পরিচালনা করছে সে। এবছরও তার ৪টি লাইসেন্স ই ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেয়েছে। 
আরো জানা যায়, তার শ্বশুরবাড়ি কলকাতার বশিরহাটে। এখানে তার নিজেরও বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কলকাতায় বাংলাদেশের ইলিশ পাচারের একজন নিয়ন্ত্রণকারী সে।

এছাড়াও, পাবনা’র রপ্তানি প্রতিষ্ঠান সেভেন স্টার (সেভেন স্টার ফিশ প্রসেসিং কোম্পানি লিমিটেড) এর মালিকের হাওড়ার বাজারে মাছের গদি এবং কলকাতায় ফ্লাটসহ রয়েছে আরো সম্পত্তি। কেবিসি নামের আরেক রপ্তানিকারকের কলকাতার বারাসাতে বাড়ি ও মাছ বাজারে আড়ত রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমকর্মী ও ব্যবসায়ীরা জানান, এই বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা কলকাতার ইলিশ বাজারে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী নেতাদের সহায়তায় নিজেদের ভারতীয় আত্মীয়স্বজনের নামে রপ্তানি লাইসেন্স করিয়ে ইলিশ পুনরায় তৃতীয় দেশে পাঠায়।

তবে এই অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি কোনো রপ্তানিকারক। ভারতের ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ তৃতীয় দেশে ইলিশ পাচারের কথা অস্বীকার করে বলেন, "বাংলাদেশ থেকে আসা ইলিশ আমরাই গ্রহণ করি এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে রি-এক্সপোর্টের কোনো বিষয় নেই।"

বাংলাদেশ ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নিজামউদ্দিন বলেন, "দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব?"
এই বিষয়ে জানতে নীরব হোসেন টুটুল, কেবিসি এবং সেভেন স্টারের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ