অনলাইন তথ্য রয়েছে ঝুঁকিতে-প্রযুক্তিবিদদের ভয়ানক বিশ্লেষণ

অনলাইন তথ্য রয়েছে  ঝুঁকিতে-প্রযুক্তিবিদদের ভয়ানক বিশ্লেষণ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলো প্রায় সবই অনলাইনে। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড থাকা আবশ্যক, কিন্তু মানুষের স্মৃতি সীমিত। এ অবস্থায় পাসওয়ার্ড ম্যানেজার জনপ্রিয় সমাধান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে প্রযুক্তিবিদদের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এটি যতটা সুবিধাজনক, ততটাই ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে।

সুবিধা: 

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা সহজেই:

⇨ প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী ও আলাদা পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন।

⇨ ভুলে যাওয়ার ভয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার হয় না, কারণ মাস্টার পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে সব অ্যাকাউন্ট নিরাপদে সংরক্ষিত থাকে।

⇨ পুনর্ব্যবহৃত বা সাধারণ পাসওয়ার্ড (যেমন জন্মদিন, নাম) ব্যবহার থেকে বিরত থাকা যায়।
 

গুগলের এক জরিপে দেখা গেছে, ১০ জন আমেরিকানের মধ্যে ৬ জনই খুব সাধারণ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার এই ভুল এড়িয়ে শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
 

ঝুঁকি: 

ডিজিটাল দুনিয়ায় কিছুই পুরোপুরি নিরাপদ নয়। পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের ক্ষেত্রেও এটি সত্য। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হলো:

⇨ সকল তথ্য এক স্থানে থাকা: পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য, ব্যক্তিগত নথি-সব একসাথে। একবার এই ভল্টে অনধিকারপ্রবেশ হলেই সব তথ্য বিপদে।

⇨ ব্যাকআপ ব্যবহার না করা: সব ভালো মানের ম্যানেজারে ব্যাকআপের সুবিধা থাকলেও অনেকে ব্যবহার করেন না। যদি সার্ভারে কোনো সমস্যা হয়, তবে পাসওয়ার্ডগুলো হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

⇨ টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA): বাধ্যতামূলক নয়, কিন্তু ব্যবহার না করলে নিরাপত্তা অনেক কমে যায়। হ্যাকাররা মাস্টার পাসওয়ার্ড পেলে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।

⇨ কী-লগার বা ম্যালওয়্যার: যেই ডিভাইসে ম্যানেজার ব্যবহার হচ্ছে, যদি সেখানে কী-লগার থাকে, টাইপ করার সময় মাস্টার পাসওয়ার্ড চুরি হতে পারে।

⇨ মাস্টার পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া: মাস্টার পাসওয়ার্ড না মনে থাকলে সব অ্যাকাউন্ট একসাথে হারানোর ভয় থাকে।
 

ব্যবহারকারীর সচেতনতা জরুরি! পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের নিরাপত্তার অনেকটাই ব্যবহারকারীর সচেতনতার ওপর নির্ভরশীল। কিছু মূল পরামর্শ হলো:

◑ শক্তিশালী মাস্টার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।

◑ মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন সক্রিয় করা।

◑ বিশ্বস্ত এবং শক্তিশালী এনক্রিপশন সমৃদ্ধ ম্যানেজার বাছাই করা।

◑ নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা।
 

২০২৫ সালের জরিপের মূল তথ্যসমূহ:

☞ পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার: Bitwarden-এর ২০২৫ সালের জরিপ অনুযায়ী, ৭২% Gen Z (জেনারেশন Z) ব্যবহারকারী তাদের পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার করেন, যদিও ৭৯% জানেন যে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। ৫৯% এমনকি ডেটা লিক হওয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টেও পূর্বের পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার করেন। 
 

☞ পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা অভ্যাস: স্পেসলিফট-এর ২০২৫ সালের জরিপে দেখা গেছে, ৬৮% ব্যবহারকারী পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তাকে মনে রাখার সহজতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, তবুও অর্ধেকের বেশি এখনও পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার করেন বা সহজে মনে রাখা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন।
 

☞ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার: সি-নেট-এর ২০২৫ সালের জরিপে দেখা গেছে, ২৪% আমেরিকান ব্যবহারকারী একাধিক অ্যাকাউন্টের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। 
 

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা সরঞ্জাম হতে পারে, তবে এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসওয়ার্ড পুনর্ব্যবহার, সহজে অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার, এবং পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহারে অবহেলা—এইসব অভ্যাস আমাদের ডিজিটাল নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। তাই, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করার পাশাপাশি শক্তিশালী, ইউনিক পাসওয়ার্ড তৈরি, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করা, এবং নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আমাদের সকলের দায়িত্ব; সচেতনতা ও সঠিক অভ্যাসই পারে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ