আলুর সরকারি দর ২২ টাকা, কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা

আলুর সরকারি দর ২২ টাকা, কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আলুর দামে টানা ধস নামায় রংপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকেরা চরম সংকটে পড়েছেন। সরকার হিমাগার পর্যায়ে আলুর কেজি ২২ টাকা দর বেঁধে দিলেও বাস্তবে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। উৎপাদন খরচের তুলনায় এত কম দাম পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এতে শুধু চলতি মৌসুমেই হাজার হাজার কোটি টাকার লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে, এ বছর রংপুর জেলার ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তবে সংরক্ষণের জন্য জেলায় হিমাগার রয়েছে মাত্র ৪০টি, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টন—উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগেরও কম। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এসব হিমাগারে মজুত হওয়া ৪ লাখ ৬১ হাজার টনের মধ্যে এখন পর্যন্ত বাজারে এসেছে মাত্র এক লাখ টন। অর্থাৎ মজুতের চার ভাগের এক ভাগেরও কম আলু বিক্রি হয়েছে। চাহিদা না থাকায় হিমাগারগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য নেই, শেডগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে।

কৃষকদের হিসাবে মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদন খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২২ টাকা। বস্তা, শ্রমিক, পরিবহন ও হিমাগার ভাড়া যোগ হলে এই খরচ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। অথচ বর্তমানে বাজারে আলুর দর কেজিপ্রতি ১২ টাকা। হিমাগার খরচ বাদ দিলে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকা। ফলে সরকারি ঘোষিত ২২ টাকা ও বাস্তবে প্রাপ্ত ৫ টাকার মধ্যে বৈষম্য প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা পর্যন্ত। এতে হিমাগারে সংরক্ষিত প্রতি কেজি আলুতেই কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় ১৮ টাকা।

রংপুর বিভাগের আট জেলায় এ মৌসুমে আলু চাষ হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে। উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার টন। এর মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১১ লাখ টন। অথচ গত বছর একই সময়ে সংরক্ষিত আলুর তিন ভাগের দুই ভাগ বাজারজাত হয়েছিল, এবার তার অর্ধেকও হয়নি। ফলে শুধু হিমাগারে সংরক্ষিত আলুতেই লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা।

এদিকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নতুন আলুর আবাদ শুরু হবে এবং ৬০ দিনের মধ্যে সেই আলু বাজারে আসবে। তখন বাজারে চাহিদা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চলতি মৌসুমের আলু অনেকটাই হিমাগারেই থেকে যেতে পারে। কৃষকেরা বলছেন, এভাবে লোকসান চলতে থাকলে তারা আলু চাষ ছেড়ে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকবেন। ইতোমধ্যেই অনেক চাষি ঘরে বা গোডাউনে রাখা আলু পচে যাওয়ায় ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

হিমাগার কর্তৃপক্ষও বলছে, এবার আলু বাজারজাতের গতি অস্বাভাবিকভাবে ধীর। ডিসেম্বরের মধ্যে সংরক্ষিত সব আলু বের করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছে তারা। এতে হিমাগারের জায়গা দখল করে আলু অকারণে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

কৃষি বিভাগ মনে করছে, সরকারিভাবে আলু কেনা হলে চাষিরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। অন্যথায় আগামী মৌসুমে আলুর আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে আলু আবাদে উৎসাহিত করতে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

আলুর দাম ও সংরক্ষণ সংকট এখন কৃষি খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ঘোষিত দর ও কৃষকের বাস্তব প্রাপ্তির বৈষম্য দূর করা না গেলে এ খাত থেকে কৃষকের সরে যাওয়া অনিবার্য হয়ে উঠবে। এতে কৃষি উৎপাদনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ