গ্রহান্তরী অভিযান: অজানা প্রাণী ও উদ্ভিদের রহস্যময় যাত্রা ও বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানবজাতি আজ মহাকাশে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলার স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানের পাশাপাশি এখন আলোচনা হচ্ছে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি অন্য গ্রহে পরিবহন নিয়ে। কারণ শুধু মানুষকে পাঠালেই হবে না-দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে খাদ্য উৎপাদন, অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বহুবিধ জীবের উপস্থিতি অপরিহার্য।
কেন প্রয়োজন প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবহন?
◑ খাদ্য উৎপাদন: মানুষের জন্য টেকসই খাদ্যের উৎস তৈরি করতে হবে।
◑ অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য: উদ্ভিদই পারে এই চক্র বজায় রাখতে।
◑ জীববৈচিত্র্য: ক্ষুদ্র পোকামাকড়, মাছ বা মৌমাছির মতো প্রাণী খাদ্যচক্রকে সচল রাখবে।
◑ মানসিক স্বস্তি: গবেষণায় দেখা গেছে, গাছপালা ও প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের মানসিক চাপ হ্রাস করে।
বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ-
⇨ মহাকর্ষের ভিন্নতা: উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিকাশ পৃথিবীর গ্রাভিটিতে অভিযোজিত। মহাশূন্য বা অন্য গ্রহের ভিন্ন গ্রাভিটি তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
⇨ রেডিয়েশন ঝুঁকি: মহাকাশের কসমিক রশ্মি জীবের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
⇨ পুষ্টি ও সম্পদ ঘাটতি: পানি, মাটি ও প্রয়োজনীয় খনিজ কিভাবে টেকসইভাবে সরবরাহ করা যাবে, সেটি বড় প্রশ্ন।
⇨ ইকোসিস্টেম স্থিতিশীলতা: সীমিত পরিবেশে প্রাণী–উদ্ভিদের সহাবস্থান সঠিকভাবে বজায় রাখা জটিল।
ইতিমধ্যেই যা করা হয়েছে-
◑ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (ISS): লেটুস, আলু, টমেটো ও ফুল সফলভাবে চাষ করা হয়েছে।
◑ ক্ষুদ্র প্রাণী পরীক্ষা: মাছি, কেঁচো বা কিছু কীট মহাকাশে বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছে।
◑ ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি: প্রাণীর শুক্রাণু ও ভ্রূণ হিমায়িত করে মহাকাশে পাঠানোর গবেষণা চলছে, যা ভবিষ্যতে বড় প্রাণী পরিবহনের বিকল্প হতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা-
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, প্রথমে শৈবাল, মস ও ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ দিয়ে পরীক্ষামূলক ইকোসিস্টেম তৈরি করা হবে। পরে ধীরে ধীরে খাদ্য উৎপাদনকারী উদ্ভিদ ও ছোট প্রাণী যুক্ত করা হবে। দীর্ঘমেয়াদে কৃত্রিম বায়োডোমে সম্পূর্ণ জীববৈচিত্র্য তৈরি করে মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে।
এই উদ্যোগ ঘিরে একটি বড় বিতর্কও রয়েছে-অন্য গ্রহে পৃথিবীর প্রাণী–উদ্ভিদ পাঠিয়ে আমরা কি সেখানকার সম্ভাব্য জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছি না? অনেক বিজ্ঞানী তাই "প্ল্যানেটারি প্রোটেকশন" নীতির কথা বলছেন, যাতে নতুন গ্রহের প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ থাকে।
গ্রহান্তরী মিশনে প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবহন ভবিষ্যতের মানব সভ্যতার জন্য এক অপরিহার্য ধাপ। তবে এর সাথে যুক্ত রয়েছে প্রযুক্তিগত, বৈজ্ঞানিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ। মানবজাতি যদি সত্যিই পৃথিবীর বাইরে স্থায়ী আবাস গড়তে চায়, তবে এই প্রশ্নগুলোর সমাধান করেই এগোতে হবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।