মাত্র কয়েকটি খাবারই আপনার ত্বককে দিবে ঝকঝকে দীপ্তি

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ, যা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয় বরং ভেতরের সুস্থতার প্রতিফলনও বটে। বয়স, জীবনযাপন, দূষণ, সূর্যের আলো ও মানসিক চাপ-সব কিছুর প্রভাব ত্বকে পড়ে। তবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে খাদ্যাভ্যাস। গবেষণায় প্রমাণিত, সঠিক খাবার শরীরকে যেমন সুস্থ রাখে, তেমনি ত্বককেও ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও সতেজ করে তোলে।
গাজরে ভিটামিন-এ এর শক্তি: গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন শরীরে গিয়ে ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়, যা ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করে। এটি ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং সূক্ষ্ম বলিরেখা কমায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে বিটা-ক্যারোটিন ফ্রি-র্যাডিক্যালের আক্রমণ প্রতিরোধ করে, ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
টমেটো হতে পারে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন! টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতো কাজ করে। পাশাপাশি টমেটো রক্তসঞ্চালন উন্নত করে, যা ত্বককে ভেতর থেকে দীপ্তিময় করে।
দই-ভেতর ও বাইরে উভয় যত্ন: দইয়ে রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, জিঙ্ক ও বি-ভিটামিন, যা মৃত কোষ দূর করে ও ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে। এর প্রোবায়োটিক উপাদান অন্ত্রকে সুস্থ রাখে। অন্ত্র সুস্থ থাকলে শরীরের টক্সিন জমে না, ফলে ত্বকে স্বাভাবিক জেল্লা ফুটে ওঠে।
শসা দেয় শীতলতা ও হাইড্রেশন: শসার ৯৫% পানি ত্বককে আর্দ্র রাখে। এতে থাকা সিলিকা ও ভিটামিন কে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে, ডার্ক সার্কেল হালকা করে এবং শীতলতা প্রদান করে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল হলো কোলাজেন উৎপাদনের চাবিকাঠি! কমলা, লেবু, কিউই, পেয়ারা কিংবা স্ট্রবেরি-এসব ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি হলো কোলাজেন উৎপাদনের মূল উপাদান। কোলাজেন ত্বককে টানটান রাখে, বার্ধক্যের ছাপ কমায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
ভিটামিন ই: অ্যান্টি-এজিং উপাদান- অলিভ অয়েল, বাদাম, সূর্যমুখী বীজ ও অ্যাভোকাডোতে প্রচুর ভিটামিন ই থাকে। এটি রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ত্বককে দীর্ঘসময় তরুণ রাখার জন্য পরিচিত।
পানি: দিনে পর্যাপ্ত পানি পান ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। পানির অভাব হলে ত্বক শুষ্ক ও নিষ্প্রভ হয়ে যায়, তাই প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি।
আরও যেসব খাবার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়-
◑ বাদাম ও আখরোট: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা ত্বকের প্রদাহ কমায় ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।
◑ সবুজ শাকসবজি (পালং, কেল): এতে থাকা আয়রন, ফলেট, ভিটামিন এ ও সি ত্বককে পুষ্টি যোগায়।
◑ বেরিজাতীয় ফল (ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি): শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য ধীর করে।
◑ গ্রিন টি: এতে থাকা ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং বলিরেখা কমায়।
◑ ডার্ক চকলেট: কোকোতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ত্বককে মসৃণ করে এবং হাইড্রেটেড রাখে।
◑ মাছ (স্যালমন, সার্ডিন, টুনা): ওমেগা-৩ ত্বককে কোমল ও প্রদাহমুক্ত রাখে।
জীবনধারা যা ত্বকের উজ্জ্বলতায় প্রভাব ফেলে-
⇨ পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের সময় ত্বক কোষ মেরামত হয়।
⇨ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে ব্রণ ও ত্বক নিষ্প্রভ হয়।
⇨ সুষম খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত তেল, ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি ত্বককে দ্রুত বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেয়।
⇨ শারীরিক ব্যায়াম: ব্যায়াম রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে, যা ত্বককে প্রাকৃতিক দীপ্তি দেয়।
ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য কোনো ম্যাজিকাল শর্টকাট নেই। আসল সমাধান লুকিয়ে আছে খাদ্যতালিকার সঠিক বাছাই ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারায়। ভিটামিন এ, সি, ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার-যেমন গাজর, টমেটো, দই, শসা, সাইট্রাস ফল, বাদাম, মাছ ও সবুজ শাকসবজি-ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি ত্বককে করে তোলে সত্যিকারের দীপ্তিময়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।