আয়রনের অভাব, রক্তস্বল্পতা ও আপনার স্বাস্থ্য: জানা জরুরি কারণ ও সমাধান!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এমন এক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, যার লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দিলেও প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। সেটি হলো আয়রন ডেফিসিয়েন্সি বা আয়রনের ঘাটতি, যা পরবর্তীতে জন্ম দেয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অ্যানিমিয়াকে বলা হয় এক ধরনের "silent epidemic", কারণ এটি অজান্তেই শরীরের ভেতর শক্তি, মনোযোগ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষয় করে।
আয়রন বা লোহা হলো এক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে অপরিহার্য। হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো ফুসফুস থেকে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া। আয়রনের ঘাটতি হলে শরীর পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না, ফলে রক্ত অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা হারায়, যা রক্তস্বল্পতার দিকে নিয়ে যায়।
সাধারণ লক্ষণ: আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া হলে শরীরে দেখা দিতে পারে-
⇨ অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
⇨ মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়ফড়
⇨ ফ্যাকাশে ত্বক ও ঠোঁট
⇨ চুল পড়া ও নখ ভেঙে যাওয়া
⇨মনোযোগ কমে যাওয়া ও কাজে অমনোযোগী হওয়া
⇨ হাত–পা ঠান্ডা অনুভব করা
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী: সবাই রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে, তবে কিছু গোষ্ঠী বেশি ঝুঁকিতে-
⇨ মহিলা: ঋতুস্রাব ও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে।
⇨ শিশু ও কিশোর–কিশোরী: দ্রুত বৃদ্ধি ও পুষ্টির ঘাটতির কারণে।
⇨ বয়স্ক ব্যক্তি: খাদ্যাভ্যাস সীমিত হওয়ায় আয়রনের ঘাটতি বেশি দেখা দেয়।
⇨ শাকাহারি বা নিরামিষভোজী: পশু উৎস থেকে আয়রন না পাওয়ায় ঝুঁকি বেশি।
আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার—
◑ প্রাণিজ উৎসের আয়রন (হিম আয়রন): মাংস, কলিজা, মাছ, ডিম।
◑ উদ্ভিজ্জ উৎসের আয়রন (নন-হিম আয়রন): পালং শাক, কলাই, মসুর ডাল, ছোলা, কুমড়ার বীজ, খেজুর।
◑ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: কমলা, লেবু, টমেটো—যা আয়রন শোষণে সাহায্য করে।
প্রতিরোধ ও করণীয়:
☞ সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।
☞ ভিটামিন সি-এর সাথে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, যাতে শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
☞ চা–কফি খাওয়ার সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা, কারণ এতে থাকা ট্যানিন আয়রন শোষণ কমিয়ে দেয়।
☞ প্রয়োজনে আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত। এর প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতাও ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে আয়রনের ঘাটতি মেধা বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
আয়রন ঘাটতি ও রক্তস্বল্পতা শুধুই একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়; এটি ব্যক্তিগত জীবন, অর্থনীতি ও সমাজের ওপর নীরব চাপ সৃষ্টি করছে। সময়মতো সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে এটি পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য। তাই এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, যাতে "অদৃশ্য মহামারি" বলে পরিচিত এই রক্তস্বল্পতা আর কোনো জীবনকে নীরবে ক্ষয় করতে না পারে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।