মাত্র কয়েক মাসেই নতুন চুল গজানো ও চুলের গোড়া মজবুত করার রহস্য-সহজে তৈরি করার উপায় জানুন!

মাত্র কয়েক মাসেই নতুন চুল গজানো ও চুলের গোড়া মজবুত করার রহস্য-সহজে তৈরি করার উপায় জানুন!
ছবির ক্যাপশান, মাত্র কয়েক মাসেই নতুন চুল গজানো ও চুলের গোড়া মজবুত করার রহস্য-সহজে তৈরি করার উপায় জানুন!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

চুল পড়া এক অস্বস্তিকর বাস্তবতা। শুধু বয়স বাড়লেই নয়, আজকাল কিশোর–তরুণ থেকে শুরু করে প্রায় সবার মধ্যেই এই সমস্যাটি দেখা যাচ্ছে। দূষণ, স্ট্রেস, ঘুমের অভাব, হরমোনের পরিবর্তন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যাকে আরও প্রকট করছে। ফলে বাজারে নানান রাসায়নিক সিরাম, শ্যাম্পু ও ওষুধ বিক্রি হচ্ছে, তবে সেগুলোর ফলাফল অনেক সময় সাময়িক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-সংশ্লিষ্ট। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক ভেষজের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। সেই তালিকায় বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে রোজমেরি ওয়াটার।

রোজমেরি (Rosmarinus officinalis) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি চিরসবুজ গাছ। এর পাতা সুগন্ধি ও তীক্ষ্ণ স্বাদের জন্য রান্নায় ব্যবহার হলেও, ভেষজ চিকিৎসায় এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। প্রাচীন গ্রীক ও রোমানরা রোজমেরিকে "স্মৃতিশক্তি ও প্রাণশক্তি বৃদ্ধিকারী উদ্ভিদ" হিসেবে দেখত। বর্তমানে আধুনিক গবেষণায়ও এর বিভিন্ন বায়োঅ্যাকটিভ যৌগের কার্যকারিতা প্রমাণিত হচ্ছে। রোজমেরির পানি, অর্থাৎ রোজমেরি পাতা সেদ্ধ করে তৈরি করা তরল, সহজ ও নিরাপদে ব্যবহারের কারণে সৌন্দর্যচর্চায় ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে।
 

কীভাবে কাজ করে রোজমেরি ওয়াটার?

⇨কারনোসিক অ্যাসিড (Carnosic acid) ও রক্ত সঞ্চালন: রোজমেরির প্রধান সক্রিয় যৌগ হলো কারনোসিক অ্যাসিড। এটি মাথার ত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত নার্ভ ও টিস্যু পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। বেশি রক্ত সঞ্চালন মানে চুলের ফলিকল বেশি পুষ্টি ও অক্সিজেন পায়, যা নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
 

⇨ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাচুর্য: মাথার ত্বকের কোষ অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে। রোজমেরি পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনয়েড ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয়।
 

⇨ ডিএইচটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ: পুরুষ ও নারী উভয়ের চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ হলো Dihydrotestosterone (DHT) হরমোন। গবেষণায় প্রমাণিত, রোজমেরি নির্যাস DHT কার্যকারিতা কিছুটা দমন করতে সক্ষম, ফলে ফলিকল ধ্বংস হওয়া ধীর হয়ে যায়।
 

⇨ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রভাব: খুশকি বা ছত্রাক সংক্রমণ মাথার ত্বক দুর্বল করে দেয়। রোজমেরি ওয়াটারের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে, সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
 

⇨ স্নায়ুতন্ত্রে ইতিবাচক প্রভাব: আশ্চর্যের বিষয় হলো, রোজমেরির ঘ্রাণই মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে। এটি স্ট্রেস কমায় ও ঘুমের মান উন্নত করে, যা পরোক্ষভাবে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
 

সহজ ও কার্যকর ব্যবহারবিধি:

এক কাপ পানিতে ৫–৬টি তাজা বা শুকনো রোজমেরি পাতা দিয়ে ১০–১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। শ্যাম্পুর পর ভেজা চুলে স্প্রে করে হালকা ম্যাসাজ করুন। চাইলে সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলা যায়। সপ্তাহে অন্তত ২–৩ বার ব্যবহার করলে ফলাফল স্পষ্ট হয়।
 

রোজমেরি অয়েল বনাম রোজমেরি ওয়াটার:

রোজমেরি অয়েল অনেক বেশি কনসেন্ট্রেটেড, তাই সোজা মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে জ্বালা বা অ্যালার্জি হতে পারে। সাধারণত এটি ক্যারিয়ার অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
রোজমেরি ওয়াটার তুলনামূলক হালকা ও কোমল। নিয়মিত ব্যবহার করা সহজ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কম। তাই সংবেদনশীল ত্বকেও নিরাপদ।
 

২০১৫ সালে প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ছয় মাস নিয়মিত রোজমেরি নির্যাস ব্যবহারকারীদের মাথায় নতুন চুল গজানোর হার প্রায় মিনোক্সিডিল ব্যবহারকারীদের সমান। পার্থক্য হলো-রোজমেরির ক্ষেত্রে স্কাল্প ইরিটেশন বা চুলকানি ছিল তুলনামূলক কম।

এছাড়া বিভিন্ন ট্রায়ালে দেখা গেছে, রোজমেরি তেল মাথার ত্বকে "VEGF" (Vascular Endothelial Growth Factor) নামক প্রোটিন সক্রিয় করে, যা নতুন রক্তনালী তৈরি করে চুলের ফলিকলকে পুনরুজ্জীবিত করে।
 

সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতা:

◑ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।

◑ অ্যালার্জি বা স্কাল্প সেনসিটিভিটি থাকলে প্রথমে ছোট অংশে পরীক্ষা করা ভালো।

◑ রোজমেরি ওয়াটার চুলের যত্নে সহায়ক হলেও এটি কোনো "তাৎক্ষণিক সমাধান" নয়। নিয়মিত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারেই সুফল মেলে।
 

চুল পড়া শুধুমাত্র সৌন্দর্য নয়, মানসিক চাপ ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেও জড়িয়ে থাকে। রাসায়নিক সমাধানের তুলনায় ভেষজ উপায় অনেক বেশি নিরাপদ ও টেকসই হতে পারে। রোজমেরি ওয়াটার সেই প্রাকৃতিক সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো থেকে শুরু করে ফলিকল সুরক্ষিত রাখা পর্যন্ত বহু দিক থেকে কার্যকর।

আধুনিক গবেষণা বলছে, এর কার্যকারিতা মিনোক্সিডিলের মতো প্রচলিত চিকিৎসার কাছাকাছি হতে পারে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তাই নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে রোজমেরি ওয়াটার একদিন হয়তো হবে প্রাকৃতিক হেয়ার কেয়ারের এক নির্ভরযোগ্য সমাধান।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ