ঘুম কম হলে মেজাজ কেন চটকানো হয়ে যায়, জানেন কি?
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানব জীবনের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে ঘুমকে অনেকেই অবহেলা করেন। রাত জাগা, কাজের চাপ, মোবাইল বা ল্যাপটপে অতিরিক্ত সময়, সামাজিক যোগাযোগ-সব মিলিয়ে পর্যাপ্ত ঘুম প্রায়ই কেটে যায়। তবে ঘুম শুধু শারীরিক বিশ্রামের জন্য নয়, এটি মানসিক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রাগ বা হতাশা, একাগ্রতা কমে যাওয়া-এগুলো সাধারণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু এর পেছনে কী ঘটে মস্তিষ্ক ও শরীরে, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের সময় মস্তিষ্কে কী ঘটে?
⇨ অ্যামিগডালা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ: ঘুমের সময় অ্যামিগডালার কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে। অ্যামিগডালা মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এটি অত্যধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে আমরা ক্ষুদ্র বিষয়েও অতিরিক্ত উত্তেজিত বা রাগী হয়ে যাই।
⇨ প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের পুনর্নির্মাণ: মস্তিষ্কের এই অংশ যুক্তি, সিদ্ধান্ত ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুম কম হলে এটি যথাযথভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়।
⇨ নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্য: ঘুমের সময় সেরোটোনিন, ডোপামিন ও গাবা হরমোনের মাত্রা সমন্বয় হয়। ঘুমের অভাবে সেরোটোনিন কমে যায়, যা মেজাজ স্থিতিশীল রাখে, এবং কর্টিসল বেড়ে যায়, যা স্ট্রেস এবং উত্তেজনা বাড়ায়।
ঘুমের অভাব এবং হরমোনাল প্রভাব:
⇨ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বৃদ্ধি: ঘুম কম হলে কর্টিসল বেশি উৎপন্ন হয়। অতিরিক্ত কর্টিসল রাগ, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বাড়ায়।
⇨ সেরোটোনিন ও ডোপামিনের অভাব: এই হরমোনগুলো আনন্দ, শান্তি ও মনোসংযোগের জন্য প্রয়োজন। ঘুম না হলে এগুলোর মাত্রা কমে গিয়ে মেজাজ খিটখিটে বা হতাশা তৈরি হয়।
⇨ গ্রেলিন ও লেপ্টিনের ভারসাম্যহীনতা: ঘুম কম হলে ক্ষুধা হরমোন গ্রেলিন বেড়ে এবং লেপ্টিন কমে। অতিরিক্ত ক্ষুধা, খাবারের প্রতি আসক্তি ও ওজন বৃদ্ধি ঘুমের অভাবের ফলে মানসিক চাপ বাড়ায়।
শরীরের প্রতিক্রিয়া:
⇨ একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়: ঘুমের অভাবে মনোযোগ কমে, কাজ বা পড়াশোনায় কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
⇨ শারীরিক দুর্বলতা: ঘুম কম হলে শরীরের পুনর্জীবন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ক্লান্তি ও শক্তিহীনতা মানসিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে।
⇨ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে। এই স্বাস্থ্যঝুঁকি মেজাজের অস্থিরতা ও মানসিক চাপকে আরও জটিল করে তোলে।
সামাজিক ও পেশাগত প্রভাব: ঘুমের অভাব শুধু ব্যক্তিগত অনুভূতিতেই নয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে বড় প্রভাব ফেলে-
⇨ কর্মক্ষেত্রে: একাগ্রতা কমে যায়, সিদ্ধান্ত নেওয়া ধীর হয়, সহকর্মীর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
⇨ পরিবার ও সম্পর্ক: ক্ষুদ্র বিষয়েও রেগে যাওয়া, দৃষ্টিকোণ সংকীর্ণ হওয়া সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
⇨ শিক্ষা ও পড়াশোনা: ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। ঘুম কম হলে পরীক্ষায় বা কার্যক্রমে পারফরম্যান্স কমে।
করণীয় এবং প্রতিরোধ:
⇨ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। শিশুরা ও কিশোররা ৯-১০ ঘণ্টা ঘুম পেলে মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ভালো হয়।
⇨ ঘুমের অভ্যাস স্থাপন: একই সময়ে ঘুমানো ও ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা। ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটার ব্যবহার কমানো।
⇨ পরিবেশ ও খাদ্য: শান্ত, অন্ধকার ও আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা। হালকা খাবার খাওয়া, কফি বা চা রাতের দিকে এড়িয়ে চলা।
⇨ মানসিক চাপ কমানো: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম ঘুমের মান বাড়ায়। দিনের মধ্যে ছোট বিরতি নেওয়া ও সঠিক সময় বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের অভাব শুধুমাত্র ক্লান্তি নয়; এটি মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ, হরমোন ভারসাম্য এবং সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুম কম হলে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, রাগী হওয়া, হতাশা বা একাগ্রতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই মানসিক প্রশান্তি, কার্যকর জীবন ও সুস্থ শরীরের জন্য ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।