তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে করণীয়: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ

তথ্যপ্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে করণীয়: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাত আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত প্রসারমান ক্ষেত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ক্লাউড কম্পিউটিং, সাইবার সিকিউরিটি, ব্লকচেইন কিংবা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-সবই এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমাজের চালিকাশক্তি। কিন্তু এই সম্ভাবনাময় খাতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বিশেষত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে নারীরা প্রযুক্তি পেশায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে আছে।

নারীদের কম অংশগ্রহণের প্রধান কারণগুলো:

১. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা- প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা গণিতকে এখনো "ছেলেদের বিষয়" হিসেবে ভাবা হয়। পরিবার থেকে মেয়েদেরকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হয় না।বিয়ের পর ক্যারিয়ার থেমে যাওয়ার ভয় অনেক নারীকে নিরুৎসাহিত করে।
 

২. প্রযুক্তি শিক্ষায় সীমাবদ্ধতা-  গ্রামীণ বা প্রান্তিক এলাকার মেয়েদের জন্য কম্পিউটার ল্যাব বা ইন্টারনেট সুবিধা দুর্লভ। উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হলেও, অনেক সময় তারা যথাযথ পরামর্শ বা মেন্টরশিপ পান না।
 

৩. কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ- নিরাপত্তা সংকট, হয়রানি ও কর্মস্থলের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও রাতজাগা শিফটের মতো চাহিদা অনেক নারীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে।
 

৪. প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি- কোডিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স, সাইবার সিকিউরিটি বা মেশিন লার্নিংয়ের মতো দক্ষতা অর্জনে সুযোগ সীমিত। মেয়েদের মধ্যে অনেকেই অনলাইন ফ্রি কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও ধারাবাহিকভাবে শেখার পরিবেশ পান না।
 

কেন নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি?

◑ অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বিশ্বব্যাপী গবেষণায় প্রমাণিত, প্রযুক্তি খাতে নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণ করলে দেশের জিডিপি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে।

◑ বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবন: নারীদের সৃজনশীলতা নতুন সমাধান ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আনে, যা প্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ।

◑ ডিজিটাল সমতা: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো মানে ডিজিটাল জগতে লিঙ্গ বৈষম্য কমানো।

◑ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা: নারীরা নেতৃত্ব দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেয়েরা সাহস পাবে প্রযুক্তিতে আসতে।

 

করণীয় পদক্ষেপ:

১. শিক্ষা পর্যায়ে পরিবর্তন আনা: স্কুল থেকেই মেয়েদের জন্য প্রোগ্রামিং, রোবোটিক্স, STEM শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সহজলভ্য করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তি ল্যাব ও গবেষণার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা।

২. স্কলারশিপ, বৃত্তি ও প্রণোদনা: প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় নারীদের জন্য আলাদা বৃত্তি প্রদান।গার্লস ইন টেক, উইমেন ইন ডেটা সায়েন্সের মতো আন্তর্জাতিক মডেল অনুসরণ করে বাংলাদেশে প্রোগ্রাম চালু করা।

৩. নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও নীতিমালা: কর্মস্থলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে হয়রানি প্রতিরোধ। ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক আওয়ার, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও হাইব্রিড কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা।
 

মেন্টরশিপ ও রোল মডেল তৈরি:

⇨ প্রযুক্তি খাতে সফল নারী উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের গল্প প্রচার করা।

⇨ বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক হাবে মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা, যাতে নতুন প্রজন্ম অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখতে পারে।
 

সরকারের "ডিজিটাল বাংলাদেশ" ভিশনের অংশ হিসেবে নারীদের জন্য আলাদা আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন। বেসরকারি খাতে নারীবান্ধব টেক ইনকিউবেটর, স্টার্টআপ ফান্ড ও সহজ ঋণ সুবিধা।

বাংলাদেশে বর্তমানে আইসিটি খাতে প্রায় ২৭ শতাংশ নারী কর্মরত, তবে নেতৃত্ব পর্যায়ে সংখ্যা ১০ শতাংশেরও কম। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের "শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব" প্রকল্পে অনেক ছাত্রী প্রযুক্তি শিক্ষা পাচ্ছে, তবে ধারাবাহিকভাবে চাকরির সুযোগে রূপান্তর করা হচ্ছে না। নারী উদ্যোক্তাদের অনেকেই অনলাইনে ই-কমার্স বা ডিজিটাল সার্ভিস চালু করছেন, কিন্তু টেকনিক্যাল লেভেলে প্রবেশ এখনও সীমিত।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে টেকসই ও উদ্ভাবনী করতে হলে নারী অংশগ্রহণ বাড়ানো অপরিহার্য। শিক্ষা, নীতি সহায়তা, নিরাপত্তা ও প্রণোদনার সমন্বয়ে মেয়েরা শুধু কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে না, তারা উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও নেতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করবে। প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কেবল পুরুষ নয়, নারী-পুরুষ সমান অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পূর্ণতা পাবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ