মাথা ঘোরা ও চোখের সামনে অন্ধকার দেখা- সাধারণ অসুবিধা নাকি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির সংকেত?
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
হঠাৎ দাঁড়ানোর সময় মাথা ঘুরে যাওয়া, চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসা কিংবা শরীর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা—এমন অভিজ্ঞতা অনেকের জীবনে ঘটে। কেউ এটিকে হালকা ক্লান্তি বা সাময়িক দুর্বলতা মনে করেন, আবার কেউ একে উপেক্ষা করেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, এই ধরনের উপসর্গ বারবার দেখা দিলে তা শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সতর্ক বার্তা হতে পারে।
মাথা ঘোরার পেছনে প্রধান কারণগুলো: মাথা ঘোরা একটি সাধারণ শব্দ হলেও এর পিছনে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ও রোগগত কারণ থাকতে পারে।
◑ রক্তচাপের ওঠানামা: হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে অনেকের রক্তচাপ নিচে নেমে যায়, যাকে বলা হয় Orthostatic Hypotension। এর ফলে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, মাথা ঝিমঝিম করে এবং চোখের সামনে অন্ধকার দেখা দেয়।
◑ অ্যানিমিয়া (রক্তস্বল্পতা): রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না।
এর ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে মাথা ঘোরা, অবসাদ, শ্বাসকষ্ট এমনকি অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।
◑ ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা: পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় শরীরে তরল কমে যায়। এতে রক্তচাপ নেমে যায় এবং মস্তিষ্কে সঠিকভাবে রক্ত পৌঁছায় না।
◑ লো ব্লাড সুগার (Hypoglycemia): দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা বা ডায়াবেটিসের ওষুধ/ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে রক্তে শর্করা কমে যায়। এর ফলে ঘাম, কম্পন, মাথা ঘোরা, চোখে অন্ধকার দেখা এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
◑ ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি: বিশেষ করে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, আয়রন ও ফলিক এসিডের অভাব মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার অন্যতম কারণ।
◑ ইনার ইয়ার বা ভেতরের কানের সমস্যা: কানের ভেতরে ভেস্টিবুলার সিস্টেম আছে, যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। সেখানে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে মাথা ঘোরা, কানে গুঞ্জন, এমনকি হাঁটতে অসুবিধা হয়।
◑ কার্ডিওভাসকুলার বা হৃদরোগজনিত সমস্যা: হার্টবিট অনিয়মিত হওয়া, হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে যাওয়া বা রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা থাকলেও মাথা ঘোরা হতে পারে।
চোখের সামনে অন্ধকার দেখা-এটি কেন হয়?
চোখের সামনে হঠাৎ অন্ধকার নামা সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের সাময়িক ঘাটতির কারণে হয়। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লে রক্তচাপ কমে গিয়ে চোখ ঝাপসা বা অন্ধকার লাগে। অক্সিজেন ঘাটতি হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়। দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতা বা স্নায়বিক রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
☞ বয়স্ক ব্যক্তিরা: বয়স বাড়ার সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জটিলতা বাড়ে।
☞ ডায়াবেটিস রোগীরা: ইনসুলিন ও শর্করা ওঠানামায় মাথা ঘোরা দেখা যায়।
☞ গর্ভবতী নারী: গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ ও হরমোনের পরিবর্তনে এ সমস্যা হয়।
☞ যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাবে ভোগেন।
কেন অবহেলা করা বিপজ্জনক?
বারবার মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা কখনোই হালকাভাবে নেয়া উচিত নয়। কারণ এটি হতে পারে-
⇨ স্ট্রোক বা হৃদরোগের প্রাথমিক সতর্কতা।
⇨ স্নায়বিক অসুস্থতার সূচনা।
⇨ অতিরিক্ত দুর্বলতা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
⇨ বিশেষ করে রাস্তায় চলাচল বা সিঁড়ি ওঠা-নামার সময় হঠাৎ মাথা ঘোরা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
করণীয় ও প্রতিরোধ:
☞ সচেতন জীবনযাপন:
১। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
২। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে-বিশেষত আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
৩। অতিরিক্ত কফি বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা উচিত।
☞ দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিবর্তন:
১। দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকা যাবে না।
২। হঠাৎ দাঁড়িয়ে না উঠে ধীরে ধীরে ভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত।
৩। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
চিকিৎসা পরামর্শ:
☞ বারবার সমস্যা হলে রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করা দরকার।
☞ চোখে অন্ধকার দেখা বা মাথা ঘোরার সঙ্গে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
মাথা ঘোরা কিংবা চোখে অন্ধকার দেখা অনেক সময় সাধারণ পানিশূন্যতা বা ক্লান্তির ফল হতে পারে। কিন্তু যদি এটি ঘন ঘন ঘটে, তবে তা শরীরের ভেতরে গুরুতর রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। তাই অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে জীবন বাঁচানোর উপায়।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।