ভবিষ্যতের মহামারি? PCOS-এর বিস্ময়কর প্রভাব ও সতর্কবার্তা!

ভবিষ্যতের মহামারি? PCOS-এর বিস্ময়কর প্রভাব ও সতর্কবার্তা!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বর্তমান সময়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত এবং উদ্বেগজনক বিষয় হলো পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS)। একসময় এটি সীমিত পরিসরে কিছু নারীর সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হলেও, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বজুড়ে প্রজননক্ষম বয়সী নারীদের একটি বড় অংশ এই সমস্যায় ভুগছেন। আধুনিক জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপের কারণে PCOS এখন অনেকটা "নীরব মহামারি"-তে পরিণত হয়েছে।

PCOS কী?

PCOS হলো নারীদের একটি হরমোনজনিত অসুস্থতা, যেখানে শরীরের স্বাভাবিক হরমোন ব্যালান্স ভেঙে যায়। এর ফলে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট তরলপূর্ণ সিস্ট তৈরি হয়, যা মাসিক চক্র, ডিম্বস্ফোটন (ovulation), প্রজনন ক্ষমতা এবং শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রভাবিত করে। শুধুমাত্র প্রজনন স্বাস্থ্য নয়, এটি নারীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকেও গভীরভাবে আঘাত করে।
 

সাধারণ লক্ষণসমূহ: PCOS-এর লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং অনেক সময় একাধিক লক্ষণ একসাথে দেখা যায়—

☞ মাসিক অনিয়মিত হওয়া বা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা।

☞ অকারণে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমতে না চাওয়া।

☞ মুখে, বুকে বা শরীরের অন্যান্য অংশে অস্বাভাবিক লোম গজানো।

☞ অতিরিক্ত চুল পড়া, মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।

☞ ব্রণ, ত্বকের কালো দাগ বা অন্যান্য চর্ম সমস্যা।

☞ হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন মুড সুইং বা আবেগীয় অস্থিরতা।
 

কেন এত বাড়ছে PCOS?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জীবনযাত্রার আধুনিক রূপান্তরই PCOS বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ।

এছাড়া,

⇨ সারাদিন বসে কাজ করার ফলে শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া। 

⇨ ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর নির্ভরতা।

⇨ পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া ও রাত জাগার অভ্যাস।

⇨ মোবাইল, ল্যাপটপসহ অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম।

⇨ দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও উদ্বেগ।
 

এসব কারণে শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। ইনসুলিন শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন শরীর ইনসুলিনের প্রতি কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তখন হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হয়। এর ফলেই ডিম্বাশয়ে সিস্ট তৈরি হয় এবং মাসিক চক্র বিঘ্নিত হয়।
 

মানসিক প্রভাব- 

PCOS কেবল শারীরিক সমস্যা নয়; এটি নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলে। ঘনঘন মুড সুইং, উদ্বেগ, হতাশা (ডিপ্রেশন) এবং আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া এই সমস্যার অংশ। এর ফলে ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক সময় PCOS আক্রান্ত নারীরা নিজেদের সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নও অনুভব করেন।
 

কেন এটিকে সামাজিক স্বাস্থ্য সমস্যা বলা হয়?

PCOS শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য নয়, বরং সামাজিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম একটি বড় হেলথ ক্রাইসিস। কারণ নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সরাসরি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে যুক্ত। ব্যাপক হারে তরুণীরা PCOS-এ আক্রান্ত হলে এর প্রভাব পড়বে জন্মহার, মা হওয়ার জটিলতা, এমনকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সার্বিক স্বাস্থ্যেও।

 

করণীয়: PCOS থেকে মুক্তি বা নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি জরুরি।যেমন -

◑ নিয়মিত শরীরচর্চা করা, বিশেষ করে কার্ডিও ও যোগব্যায়াম।

◑ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা-শাকসবজি, ফাইবারসমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়া।

◑ প্রক্রিয়াজাত ও অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলা।

◑ পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ঘুম নিশ্চিত করা।

◑ ধ্যান বা অন্যান্য পদ্ধতিতে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা।

◑ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা হরমোন থেরাপি গ্রহণ করা।
 

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এখন আর কোনো একক রোগীর সমস্যা নয়; এটি আধুনিক প্রজন্মের স্বাস্থ্য সংকট। নারী স্বাস্থ্য ও প্রজনন ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত হওয়ায় PCOS-এর প্রভাব আগামী প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। তাই এখনই সচেতন হওয়া, জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা এবং নিয়মিত চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় এই নীরব মহামারি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আরও বড় বিপদের মুখে ঠেলে দেবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ