দেশ নিয়ে বিদেশের মাটিতে মিথ্যাচার করছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লবিস্টরা

দেশ নিয়ে বিদেশের মাটিতে মিথ্যাচার করছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লবিস্টরা
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিদেশে বাংলাদেশকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লবিস্টরা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল ও গণমাধ্যমে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত লবিস্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট বার্তা ছড়ানো হচ্ছে। এ প্রচারণায় দেশের উন্নয়নচিত্র, অর্থনৈতিক অর্জন ও গণমানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা উপেক্ষিত হচ্ছে। বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে একপাক্ষিক বক্তব্য প্রাধান্য পাচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিদেশি সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে এসব লবিস্টরা ভিন্নধর্মী প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ সরবরাহ করছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের অভ্যন্তরে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। বিদেশের মাটিতে মিথ্যাচার প্রচারণা শুধু জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করে না, বরং কূটনৈতিক সম্পর্ককেও জটিল করে তোলে।

সম্প্রতি ইউরোপভিত্তিক কিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক লবিস্টদের সক্রিয় সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের অংশ হলেও রাষ্ট্রের সার্বিক স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। বিদেশে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা বন্ধ করে জাতির স্বার্থে তথ্যভিত্তিক ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরাই হবে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।

বিদেশে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও দলের শীর্ষ নেতাদের কার্যক্রমও এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়েছিল। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সাজীব ওয়াজেদ জয় বেশ কয়েকটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেন, নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। ওই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আওয়ামী লীগের অবস্থানকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলেও তা দেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মক ভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। 

এছাড়া ২০২৫ সালের মাঝামাঝি কলকাতায় আওয়ামী লীগের একটি অফিস খোলার খবরও আলোচনায় আসে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশের মাটিতে এমন সাংগঠনিক তৎপরতা একদিকে প্রবাসী সমর্থকদের সক্রিয় করতে পারে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলীয় অবস্থান প্রচারেরও কৌশল হতে পারে। তবে এ নিয়ে সমালোচকরা বলেন, দেশীয় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া দীর্ঘমেয়াদে কূটনৈতিক জটিলতা বাড়াতে পারে।

এই ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার অভিযোগ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লবিস্ট নিয়োগ হোক কিংবা বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার, সবই শেষ পর্যন্ত দেশের ভাবমূর্তি ও রাজনৈতিক ইমেজের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। দেশের উন্নয়নচিত্র ও বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার পরিবর্তে একপাক্ষিক বার্তা প্রাধান্য পেলে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিশ্লেষকদের অভিমত, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ এখন সময়ের দাবি।

এর আগে মে মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সমস্ত অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও হতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যা সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত করেছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এটি দ্রুত কার্যকর করা হবে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী ও হতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষদের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে’। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় (১৫ জুলাই–৫ আগস্ট, ২০২৪) গুম, খুন, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস কার্য এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ