মৃত্যুর পরেও হাতে হাতকড়া! আইন কি বলছে?
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মৃত্যুর পর আসামির হাতে হাতকড়া থাকার ঘটনা সাম্প্রতিককালে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। সাধারণ অপরাধ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ঘটনার ক্ষেত্রে মৃতদেহে হাতকড়া বা নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ২৯ সেপ্টেম্বর,২০২৫ তারিখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগে তার বেডে হাতকড়া পরানো অবস্থার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সাধারণ জনগণ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি দুটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, "৭৫ বছর বয়সী নূরুল মজিদের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবার সকাল ৮টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পোস্টে বলা হয়, অতীতেও চিকিৎসাধীন এবং মৃত ব্যক্তির হাতে হাতকড়া পরানোর ঘটনা দেখা গেছে, এবং বর্তমানেও মরহুম নূরুল মজিদের হাতে হাতকড়া দেখা যাচ্ছে।"
বাংলাদেশ পুলিশের “বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন” এর ৩৩০ নম্বর প্রবিধান অনুযায়ী, শুধুমাত্র পলায়ন রোধ করতে প্রয়োজন অনুযায়ী হাতকড়া ব্যবহার অনুমোদিত। প্রবিধানে বলা হয়েছে, গুলিবিদ্ধ, সহিংস অপরাধী বা জনসাধারণের জন্য বিপজ্জনক আসামিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে নারীদের, শিশু, অসহায় বা দুর্বল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এবং জামিনযোগ্য মামলায় হাতকড়া পরানো যাবে না। মৃত্যুর পর কোনো ব্যক্তির হাতকড়া রাখার বিষয়ে প্রবিধানে কোনো নির্দেশনা নেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃতদেহে হাতকড়া রাখা আইনগতভাবে অনুমোদিত নয় এবং এটি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে হাতকড়া খুলে ফেলা উচিত। এ ধরনের দায়িত্ববহুল পরিস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন না করা হলে তা দায়িত্বে গাফিলতির অন্তর্ভুক্ত।
পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেহে হাতকড়া থাকা রাষ্ট্রের নৈতিক ও আইনি দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, মৃত্যুর পরও মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, যা না করলে শুধু পরিবারের নয়, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পূর্বে বিভিন্ন সময়ে জেল হেফাজত বা হাসপাতালে মৃত্যুর পর আসামির দেহে হাতকড়া থাকার ঘটনা সামাজিক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তবে দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের নজির খুব কমই পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্পষ্ট গাইডলাইন না থাকায় এবং প্রশিক্ষণ ও মনোযোগের অভাবের কারণে এই পরিস্থিতি বারবার ঘটছে।
বেশ কিছু হাসপাতাল ও পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে আদালতে বা থানার বাইরে নেওয়ার সময় হাতকড়া পরানোর আইনত নির্দেশনা আছে। তবে চিকিৎসাধীন বা মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইন স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, জীবিত অবস্থায় যেমন মানবাধিকারের নিশ্চয়তা জরুরি, মৃত্যুর পরও মর্যাদা ও মানবিক আচরণ রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশি প্রশিক্ষণ জোরদার করা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের নিয়মকানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা কমানো সম্ভব হবে। মৃত্যুর পর হাতকড়া রাখা শুধু ব্যক্তিগত মর্যাদা হরণের বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেরও প্রশ্ন তোলে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।