হরমোনের ওঠানামা আর ত্বকের রহস্য, কেন পরিবর্তন হয়, আর কীভাবে যত্ন নেবেন!!

হরমোনের ওঠানামা আর ত্বকের রহস্য, কেন পরিবর্তন হয়, আর কীভাবে যত্ন নেবেন!!
ছবির ক্যাপশান, হরমোনের ওঠানামা আর ত্বকের রহস্য, কেন পরিবর্তন হয়, আর কীভাবে যত্ন নেবেন!!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

আমাদের শরীরের প্রতিটি কার্যক্রমের পেছনে হরমোনের ভূমিকা অপরিসীম। হরমোন কেবল অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য নয়, আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য বিশেষত ত্বক-এর ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই অনেক সময় আমরা খেয়াল করি, বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা, ঋতুচক্র বা মেনোপজে ত্বকে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেয়। কখনও ব্রণ, কখনও শুষ্কতা, আবার কখনও অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব-এসবের মূল কারণ অনেক ক্ষেত্রেই হরমোনাল পরিবর্তন।

হরমোন ও ত্বকের সম্পর্ক: ত্বকের অবস্থা অনেকাংশে নির্ভর করে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরন, কর্টিসল ও থাইরয়েড হরমোন-এর মাত্রার ওপর।ইস্ট্রোজেন ত্বককে আর্দ্র, কোমল ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। প্রোজেস্টেরন ত্বকের তৈল নিঃসরণে প্রভাব ফেলে। টেস্টোস্টেরন বেশি হলে ত্বক তৈলাক্ত হয় এবং ব্রণ দেখা দিতে পারে। কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) অতিরিক্ত হলে ত্বকে প্রদাহ, ব্রণ বা একজিমার মতো সমস্যা বেড়ে যায়। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ত্বককে কখনও অতিরিক্ত শুষ্ক, আবার কখনও ফোলা বা নিস্তেজ করে তোলে।

কোন পর্যায়ে কী ধরনের প্রভাব ফেলে?

১. বয়ঃসন্ধিকাল: এই সময় টেস্টোস্টেরন বেড়ে যায়। ফলে তৈলগ্রন্থি সক্রিয় হয় এবং ব্রণ দেখা দেয়।

২. ঋতুচক্র: পিরিয়ডের কয়েকদিন আগে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন ওঠানামা করে। এতে কারও কারও ত্বকে ব্রণ বা লালচে দাগ দেখা দেয়।

৩. গর্ভাবস্থা: ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে অনেকের ত্বক উজ্জ্বল হয় (pregnancy glow), আবার কারও কারও মুখে দাগ, মেছতা বা ব্রণ বাড়তে পারে।

৪. মেনোপজ: এই সময় ইস্ট্রোজেন কমে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক, পাতলা ও বলিরেখাযুক্ত হতে শুরু করে।

৫. স্ট্রেস ও কর্টিসল: অতিরিক্ত চাপ কর্টিসলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং চুলকানি বাড়তে পারে।

ত্বকের যত্নে করণীয়: হরমোনাল পরিবর্তন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে সচেতন যত্নে ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখা যায়।

সঠিক পরিচর্যা: নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।

খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন A, C, E, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পর্যাপ্ত পানি ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: ধ্যান, যোগব্যায়াম বা নিয়মিত ব্যায়াম কর্টিসল কমিয়ে ত্বককে সুস্থ রাখে।

পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের সময় শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার হয়, যা ত্বককে সতেজ রাখে।

ক্ষতিকর অভ্যাস এড়ানো: ধূমপান, অতিরিক্ত কফি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে, ফলে ত্বকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা থাকলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ত্বকের সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক প্রসাধনীতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ হরমোনাল ভারসাম্যের প্রতিফলন। হরমোনের ওঠানামা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, সচেতন জীবনযাপন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে ত্বককে দীর্ঘদিন সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখা সম্ভব।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ