লাল, নীল বা হলুদ? কোন রঙে পড়াশোনায় ফোকাস সর্বোচ্চ, গবেষণা জানাচ্ছে !

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শিক্ষার্থীদের শেখার সাফল্যের অন্যতম শর্ত হলো দীর্ঘসময় মনোযোগ ধরে রাখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- ডিজিটাল যুগে ক্রমাগত বিভ্রান্তি, মানসিক চাপ ও পরিবেশগত একঘেয়েমি শিক্ষার্থীর মনোযোগকে ভেঙে দিচ্ছে। ঠিক এই জায়গায় রঙ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, যা কেবল চোখকে আনন্দ দেয় না, বরং মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যক্রমকে সক্রিয় করে শেখার মানোন্নয়ন ঘটায়।
মানব মস্তিষ্কে রঙ সরাসরি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের মাধ্যমে প্রভাব ফেলে। ভিন্ন ভিন্ন রঙ ভিন্ন ধরনের স্নায়বিক রাসায়নিকের কার্যক্রম বাড়ায় বা কমায়। যেমন:
◑ নীল ও সবুজ রঙ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে প্রশান্তি আনে, মানসিক চাপ কমায় এবং শিক্ষার্থীদের একাগ্র করে।
◑ লাল, হলুদ ও কমলা ডোপামিন নিঃসরণ বাড়িয়ে উত্তেজনা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
◑ সাদা রঙ মানসিক স্বচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতার অনুভূতি জাগিয়ে শিক্ষার্থীর চিন্তাভাবনাকে গোছালো করে।
এই কারণেই মনোবিজ্ঞানে রঙকে বলা হয় "সাইলেন্ট স্টিমুলাস" যা নিঃশব্দে মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে।
বিস্তারিত প্রভাব-
⇨ নীল: সবচেয়ে কার্যকরী শিক্ষার রঙ হিসেবে ধরা হয়। এটি দীর্ঘসময় পড়াশোনা, বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান বা জটিল বিষয় পড়ার সময় একাগ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নীল পরিবেশে থাকা শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় গড়ে বেশি সময় ধরে মনোযোগী থাকে।
⇨ সবুজ: প্রাকৃতিক ভারসাম্যের প্রতীক। চোখের আরাম দেয় এবং পড়াশোনায় মানসিক চাপ কমায়। দীর্ঘ ক্লাস বা টানা পড়ার পর সবুজ রঙের উপস্থিতি শিক্ষার্থীর মানসিক পুনর্জাগরণ ঘটায়।
⇨ লাল: মস্তিষ্ককে সতর্ক করে। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চিহ্নিত করতে লাল ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর। তবে অতিরিক্ত লাল উদ্বেগ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
⇨ হলুদ: সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বাড়ায়। ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য এটি বিশেষভাবে সহায়ক, কারণ এটি আনন্দদায়ক আবহ তৈরি করে এবং শেখার প্রতি আগ্রহ জাগায়।
⇨ কমলা: উষ্ণতা ও প্রাণচাঞ্চল্য যোগ করে। গ্রুপ ডিসকাশন বা টিমওয়ার্কে কমলা পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ায়।
⇨ সাদা: পরিচ্ছন্ন ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। পরীক্ষার হলে সাদা ব্যবহার শিক্ষার্থীর উদ্বেগ কমাতে কার্যকর।
বাস্তব প্রয়োগ-
☞ শ্রেণিকক্ষের নকশা: দেয়াল ও আসবাবে নীল-সবুজ টোন ব্যবহার শিক্ষার্থীর দীর্ঘসময় মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কক্ষে উজ্জ্বল রঙ (হলুদ, কমলা) ব্যবহার তাদের সক্রিয়তা বাড়ায়।
☞ শিক্ষণ উপকরণ:
পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ লাল বা হলুদে হাইলাইট করলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত মূল তথ্য মনে রাখতে পারে। চার্ট, ফ্ল্যাশকার্ড বা অনলাইন স্লাইডে রঙের ভিন্নতা শেখাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
☞ ডিজিটাল শিক্ষা: একঘেয়ে সাদা-কালো কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের ক্লান্ত করে ফেলে। সঠিক রঙের সমন্বয় (যেমন ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা নীল-সবুজ, মূল বিষয়বস্তুতে লাল/হলুদ) অনলাইন শেখাকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
☞ পড়াশোনার ঘর: ঘরে পড়ার পরিবেশ একঘেয়ে সাদা দেয়ালে সীমাবদ্ধ রাখলে মনোযোগ ভেঙে যেতে পারে। ডেস্কে রঙিন নোটবুক, পোস্ট-ইট বা হাইলাইটার ব্যবহার করলে শেখা হয় আরও প্রাণবন্ত।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা-
জাপানের কিছু স্কুলে শ্রেণিকক্ষের দেয়াল হালকা সবুজ ও নীল রঙে রাঙানো হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা আরাম বোধ করে। এছাড়াও, ইউরোপের কয়েকটি দেশে পরীক্ষার হলে সাদা ও হালকা নীল ব্যবহার বাধ্যতামূলক, কারণ এটি শিক্ষার্থীর উদ্বেগ কমায়।
অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলো (যেমন কোর্স কনটেন্ট ডিজাইন) বর্তমানে রঙের মনস্তত্ত্বকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন তৈরি করছে, যাতে শিক্ষার্থীর শেখা কার্যকর হয়।
শিক্ষা শুধু বই বা শিক্ষক-কেন্দ্রিক নয়, বরং পরিবেশ ও মানসিক উদ্দীপনার সমন্বিত প্রক্রিয়া। সেখানে রঙের সঠিক ব্যবহার শিক্ষার্থীর মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও শেখার আগ্রহকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। একদিকে নীল-সবুজ শিক্ষার্থীর মনকে শান্ত ও একাগ্র করে, অন্যদিকে লাল, হলুদ ও কমলা শেখার উদ্দীপনা জাগায়। আর সাদা রঙ শেখার পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও ইতিবাচক রাখে। অতএব বলা যায়—সঠিক রঙের ব্যবহার কেবল শ্রেণিকক্ষকে সুন্দর করে তোলে না, বরং শিক্ষার্থীর শেখার মান উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।