আপনার স্নায়ু বিপন্ন! ডায়াবেটিসে ক্ষয় শুরু হওয়ার আগে জানুন কারণ ও প্রতিকার
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
ডায়াবেটিসকে সাধারণত "সাইলেন্ট কিলার" বলা হয়, কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও কার্যক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ডায়াবেটিসের সবচেয়ে জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর একটি হলো ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (Diabetic Neuropathy) যেখানে শরীরের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। গবেষণা বলছে, দীর্ঘ সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে প্রতি ২ জন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে প্রায় ১ জনই কোনো না কোনোভাবে নিউরোপ্যাথিতে ভুগতে পারেন।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কী?
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলো একধরনের স্নায়ুজনিত সমস্যা, যা মূলত রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারণে স্নায়ুর ক্ষয় থেকে সৃষ্টি হয়। স্নায়ু শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মস্তিষ্কের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করে। এই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যথা, অবশভাব, জ্বালাপোড়া, বা দুর্বলতার মতো নানা জটিল উপসর্গ দেখা দেয়।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির ধরন: স্নায়ুক্ষয়ের অবস্থান ও প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি চার প্রকারে ভাগ করা যায়
☞ পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি: সবচেয়ে সাধারণ ধরন। পা, গোড়ালি, আঙুল, হাত ইত্যাদি প্রভাবিত হয়। জ্বালাপোড়া, অবশভাব, সুচ ফোটার মতো অনুভূতি, বিশেষ করে রাতে, তীব্র হয়।
☞ অটোনমিক নিউরোপ্যাথি: দেহের অভ্যন্তরীণ স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম যেমন হজম, রক্তচাপ, হার্টবিট, ঘাম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌন সমস্যা বা হাইপোটেনশন হতে পারে।
☞ র্যাডিকুলোপ্লেক্সাস নিউরোপ্যাথি (ডায়াবেটিক অ্যামিওট্রফি): তুলনামূলকভাবে বিরল। এটি মূলত উরু, নিতম্ব বা কোমরের স্নায়ুতে আক্রমণ করে, যার ফলে হঠাৎ ও তীব্র ব্যথা ও মাংসপেশীর দুর্বলতা দেখা দেয়।
☞ মনোনিউরোপ্যাথি (ফোকাল নিউরোপ্যাথি): শরীরের নির্দিষ্ট কোনো স্নায়ুকে প্রভাবিত করে। হঠাৎ চোখ, মুখ বা হাত-পায়ের নির্দিষ্ট অংশে ব্যথা বা দুর্বলতা সৃষ্টি করতে পারে।
উপসর্গ: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির উপসর্গ ধীরে ধীরে বাড়ে। প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে
⇨ হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, সুচ ফোটার অনুভূতি বা অবশভাব
⇨ পেশীতে দুর্বলতা বা শক্তি হ্রাস
⇨ রাতে ব্যথা বৃদ্ধি
⇨ হজমে সমস্যা, বমি বমি ভাব বা কোষ্ঠকাঠিন্য
⇨ ঘাম কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত হওয়া
⇨ যৌন সমস্যা (পুরুষদের ক্ষেত্রে ইরেকটাইল ডিসফাংশন, নারীদের ক্ষেত্রে যৌন আগ্রহ হ্রাস)
⇨ হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া বা মাথা ঘোরা
কেন হয় ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি?
☞ রক্তে অতিরিক্ত শর্করা: দীর্ঘদিন ধরে হাইপারগ্লাইসেমিয়া স্নায়ুর কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে।
☞ অক্সিডেটিভ স্ট্রেস: উচ্চ গ্লুকোজ কোষে ফ্রি র্যাডিক্যাল বাড়িয়ে স্নায়ু নষ্ট করে।
☞ রক্তনালীর ক্ষতি: ডায়াবেটিসে ছোট রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়, ফলে স্নায়ু পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না।
☞ জিনগত ও জীবনযাত্রার প্রভাব: ধূমপান, অ্যালকোহল, স্থূলতা ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ: ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য না হলেও প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
⇨ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
⇨ নিয়মিত ব্যায়াম: স্নায়ুর রক্তসঞ্চালন উন্নত করে।
⇨ সুষম খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্নায়ুর জন্য উপকারী।
⇨ পা ও হাতের যত্ন: ডায়াবেটিক ফুট আলসারের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন পা পরীক্ষা করা জরুরি।
⇨ ঔষধ: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টি-সিজার বা পেইন-ম্যানেজমেন্ট ওষুধ দেওয়া হয়।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলো ডায়াবেটিসের এক নীরব অথচ মারাত্মক পরিণতি, যা ধীরে ধীরে জীবনের মান কমিয়ে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ, সঠিক জীবনযাপন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই জটিলতা অনেকাংশে ঠেকানো সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।