রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ শীর্ষক আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে কার্যকর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকটের টেকসই সমাধানে সাত দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা শেষ হয়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ দুর্বল হওয়ায় তহবিল ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, "এই সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে তাদের সমাধানও সেখানেই নিহিত।"
এসময় তিনি মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে দ্রুত তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সংকটের একমাত্র সমাধান হলো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন।
বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, এই সংকটের কারণে বাংলাদেশকে বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবাহসহ নানা অপরাধ জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের কারণে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।
এরপর প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকটের চূড়ান্ত সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিম্নলিখিত সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেনঃ
১. প্রত্যাবাসনের রোডম্যাপঃ নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করা এবং রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
২. চাপ প্রয়োগঃ মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগ করে সহিংসতা বন্ধ করা ও প্রত্যাবাসন শুরু করা।
৩. আন্তর্জাতিক উপস্থিতিঃ রাখাইনে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
৪. আস্থা তৈরিঃ রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় টেকসই একীভূতকরণের জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া।
৫. পূর্ণ অর্থায়নঃ যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (Joint Response Plan)-এ পূর্ণ অর্থায়নে দাতাদের সমর্থন নিশ্চিত করা।
৬. জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারঃ জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
৭. সীমান্ত অপরাধ দমনঃ মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া ও সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ করা।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যের শেষে বলেন, "বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায় রাখতে পারে না। আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, একযোগে কাজ করে এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।"
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।