এক কার্যক্রম, অসংখ্য সম্ভাবনা শিক্ষার্থীর লুকানো শক্তি খুলে দেবে এই পথ!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত পরীক্ষাভিত্তিক ও পাঠ্যকেন্দ্রিক। তবে শুধু বইপড়াই বা পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে না। কো-কারিকুলার কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি তাদের সৃজনশীলতা, আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে, নতুন চিন্তার দিগন্ত উন্মোচন করে এবং ভবিষ্যতের জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে।
শুধু একাডেমিক অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে শিশুর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিকাশের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই কমপক্ষে একটি কো-কারিকুলার কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ ও সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য।
উপকারিতা:
১. পূর্ণাঙ্গ বিকাশ: কো-কারিকুলার কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়তা করে। স্কুল ও কলেজের পাঠ্যক্রম শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনে সীমাবদ্ধ থাকলেও, অতিরিক্ত কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশের সুযোগ দেয়।
২. আগ্রহ ও দক্ষতা বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও লুকানো প্রতিভা আবিষ্কার করতে পারে। নাটক, বিতর্ক, বিজ্ঞান ক্লাব বা সঙ্গীত কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা নিজের দক্ষতা চেনার পাশাপাশি তা আরও বিকশিত করতে পারে।
৩. সৃজনশীলতা ও মানসিক বিকাশ:
⇨ সৃজনশীলতার বিকাশ: গান, নাচ, চিত্রাঙ্কন বা লেখালেখির মতো কাজ শিক্ষার্থীদের কল্পনা শক্তি ও চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করে।
⇨ চিন্তার প্রসার: নতুন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকে উন্নত করে।
⇨ মানসিক চাপ হ্রাস: খেলাধুলা, মিউজিক বা আর্টের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমে এবং মনকে শান্ত রাখা যায়।
৪. সামাজিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা অর্জন:
⇨ সামাজিক দক্ষতা: বিতর্ক, মডেল ইউনাইটেড নেশনস বা সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব, যোগাযোগ এবং দলবদ্ধ কাজের ক্ষমতা বাড়ায়।
⇨ আত্ম-উন্নয়ন: কো-কারিকুলার কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও দায়বোধ বৃদ্ধি করে।
দৃঢ় নেতৃত্ব: টিম ও প্রজেক্টে অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীকে নেতৃত্ব গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা শেখায়।
৫. শারীরিক স্বাস্থ্য: খেলাধুলা ও শারীরিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ জীবনধারায় সহায়তা করে। নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও একাগ্রতা উন্নত করে।
৬. ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি:
⇨ ভবিষ্যৎ সুযোগ: ভালো একাডেমিক ফলাফলের পাশাপাশি কো-কারিকুলার অভিজ্ঞতা স্কলারশিপ, উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়।
⇨ বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব: ইউরোপ ও আমেরিকার স্কুল-কলেজগুলোতে কো-কারিকুলার কার্যক্রম বাধ্যতামূলক, যা শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে সহায়তা করে।
⇨ পেশাগত দক্ষতা: দলগত কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সময় ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ দক্ষতায় প্রশিক্ষিত করে।
কো-কারিকুলার কার্যক্রমের উদাহরণ
⇨ শারীরিক কার্যক্রম: ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, যোগ, মার্শাল আর্টস।
⇨ সৃজনশীল কার্যক্রম: গান, বাদ্যযন্ত্র, নাচ, চিত্রাঙ্কন, নাটক।
⇨ বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যক্রম: বিতর্ক, ডিবেট ক্লাব, বিজ্ঞান প্রদর্শনী, কোডিং ক্লাব।
⇨ সামাজিক ও নেতৃত্বমূলক কার্যক্রম: মডেল ইউনাইটেড নেশনস, স্কুল ক্লাব, সমাজসেবা।
বাংলাদেশে কমপক্ষে একটি কো-কারিকুলার কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা, সামাজিক দক্ষতা, নেতৃত্ব, মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করে। কেবল একাডেমিক জ্ঞান নয়, কো-কারিকুলার কার্যক্রম শিক্ষার্থীকে পূর্ণাঙ্গ, সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলে। শিক্ষার্থীরা যদি এই সুযোগ পায়, তাহলে তারা কেবল পরীক্ষায় ভালো হবে না, বরং জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও সফল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।