পেশিশক্তি বাড়াতে চান? আপেল আর সবুজ টমেটোই হতে পারে প্রাকৃতিক সমাধান!
- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শরীর সুস্থ রাখতে শুধু চেহারার যত্ন বা ওজন নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়—ভিতরের শক্তি ধরে রাখা আরও বেশি জরুরি। বয়সের সাথে সাথে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, পেশি ক্ষয় হতে থাকে, হাঁটাচলা ধীর হয়ে যায়, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। অনেকেই এই সমস্যার সমাধান খোঁজেন ওষুধ, সাপ্লিমেন্ট বা কৃত্রিম ভিটামিনে। অথচ আমাদের চারপাশেই আছে কিছু প্রাকৃতিক খাবার, যা নিঃশব্দে শরীরের ভেতরে কাজ করে, বাড়িয়ে তোলে শক্তি ও সহনশীলতা। এর মধ্যে আপেল আর সবুজ টমেটোকে বিশেষভাবে কার্যকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই দুটি খাবার শুধু স্বাদেই নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপাদানের কারণে শরীরের ভেতরকার "পাওয়ারহাউস"—পেশিকে—সুরক্ষা দেয় ও শক্তিশালী করে।
পেশিশক্তি কেন কমে যায়?
⇨ বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরে মাসল প্রোটিনের ভাঙন বেড়ে যায়।
⇨ অসুস্থতা: দীর্ঘ শয্যাশায়ী জীবন বা ক্রনিক রোগে পেশি ক্ষয় দ্রুত হয়।
⇨ ব্যায়ামের অভাব: নিয়মিত শারীরিক অনুশীলনের ঘাটতি পেশিকে দুর্বল করে।
⇨ খাদ্য ঘাটতি: প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজের অভাব শরীরকে দুর্বল করে দেয়।
এই কারণেই বৈজ্ঞানিকভাবে এমন খাবারের প্রয়োজন হয় যা প্রাকৃতিকভাবে পেশি ক্ষয় রোধ করে, শক্তি জোগায় এবং কোষকে সুরক্ষা দেয়।
➤ আপেলের শক্তি:
⇨ উরসোলিক অ্যাসিড: পেশি ক্ষয় প্রতিরোধ ও নতুন কোষ তৈরির জন্য কার্যকর।
⇨ প্রাকৃতিক শর্করা: শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে সহায়ক।
⇨ ফাইবার: হজমশক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, এবং টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
⇨ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: আপেলের ফ্ল্যাভোনয়েড ও ভিটামিন সি কোষকে বার্ধক্যজনিত ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।
⇨ হার্টের জন্য উপকারী: কোলেস্টেরল কমায় এবং হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয়।
➤ সবুজ টমেটোর শক্তি
⇨ টমাটিডিন: পেশি কোষে মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে শক্তি উৎপাদন বাড়ায়।
⇨ ভিটামিন ও খনিজ: ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও পটাসিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্নায়বিক কার্যকারিতা বাড়ায়।
⇨ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (লাইকোপিন, কিউমেরিক অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড): ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক এবং কোষের বিভাজন সঠিক রাখে।
⇨ হাড় ও ত্বকের উপকারিতা: খনিজ উপাদান হাড়কে মজবুত করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়স কমায়।
⇨ বিশেষ দিক: এতে থাকা সোলানাইন রাসায়নিক অতিরিক্ত খেলে বমি, মাথা ঘোরা বা পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমিত খাওয়াই নিরাপদ।
আপেল ও সবুজ টমেটো একসাথে খেলে শরীর শুধু শক্তি পায় না, বরং সার্বিকভাবে সুরক্ষা লাভ করে।
যেমন-
⇨ পেশি মজবুত হয়, শক্তি ধরে রাখা যায় দীর্ঘদিন।
⇨ হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একসাথে বাড়ে।
⇨ কোষ বিভাজন সঠিক থাকে, বার্ধক্য ধীর হয়।
⇨ দৈনন্দিন কাজের সহনশীলতা ও এনার্জি বৃদ্ধি পায়।
কখন এবং কীভাবে খাবেন?
☞ আপেল: প্রতিদিন একটি আপেল খেলে শরীরের জন্য যথেষ্ট। খোসাসহ খাওয়াই ভালো, কারণ উরসোলিক অ্যাসিড খোসায় বেশি থাকে।
☞ সবুজ টমেটো: কাঁচা নয়, বরং হালকা রান্না বা সালাদের সাথে অল্প পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ। সপ্তাহে ২–৩ বার খাওয়াই যথেষ্ট।
☞ কম্বিনেশন: সকালে বা দুপুরে সালাদ, স্মুদি কিংবা স্ন্যাক্স হিসেবে আপেল ও সবুজ টমেটো একসাথে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
✘ কারা সতর্ক থাকবেন?
⇨ যাদের অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক প্রবণতা বেশি, তারা সবুজ টমেটো অতিরিক্ত খাবেন না।
⇨ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য সবুজ টমেটোর সোলানাইন পরিমাণে সাবধানতা প্রয়োজন।
⇨ যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের টমেটোর অতিরিক্ত পটাসিয়াম এড়িয়ে চলা ভালো।
শক্তিশালী ও সুস্থ জীবনযাপন শুধু জিমে ঘাম ঝরানো বা কৃত্রিম সাপ্লিমেন্টে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতির সহজলভ্য খাবার—আপেল ও সবুজ টমেটো হতে পারে পেশিশক্তি রক্ষা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রাকৃতিক সমাধান। আপেল তার শর্করা, ফাইবার ও উরসোলিক অ্যাসিড দিয়ে শক্তি ও হজমশক্তি বাড়ায়, আর সবুজ টমেটো ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও টমাটিডিন দিয়ে কোষকে করে সুরক্ষিত। তবে অতিরিক্ত খেলে ঝুঁকি আছে, তাই পরিমিত খাওয়াই শ্রেয়। অর্থাৎ, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি আপেল ও পরিমিত সবুজ টমেটো যোগ করলে, শরীর পাবে প্রাকৃতিক শক্তি, দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য এবং সক্রিয় জীবনযাপনের গোপন চাবিকাঠি।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।