দেশের বাজারে ভারত থেকে ছড়াচ্ছে নকল টাকাঃ জড়িত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত হানতে যাচ্ছে ভারত। ফাঁস হয়েছে তাদের নীলনকশা । প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা সমমূল্যের নিখুঁত জাল নোট ভারতে তৈরি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। সূত্র মতে, ভয়াবহ এই অপতৎপরতার নেপথ্যে ভারতের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তারা নিজেদের মুদ্রা ছাপানোর কারিগরি ব্যবহার করে নকল মুদ্রা তৈরি করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণামতে, জাল নোট ছাপানোর এই কাজে বাংলাদেশের টাঁকশালে (সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন) ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হতে পারে। জাল নোটগুলোতে ব্যবহৃত কাগজ এবং বাংলাদেশের আসল নোটের কাগজের মধ্যে অস্বাভাবিক মিল খুঁজে পাওয়ায় এই ধারনা আরো প্রকট হচ্ছে। উল্লেখ্য, টাঁকশালের অনেক মেশিন ও যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হয়।
সূত্র আরো জানিয়েছে, এই জাল নোটগুলো ভারতে তৈরি হওয়ার পর গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। তারপর বিভিন্ন হাত ঘুরে তা চলে যাচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। এই চক্রে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে ভারতে পলাতক আওয়ামীলীগের কিছু নেতা সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দু'পক্ষের সমন্বয়েই ডিলার থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত একটি সুসংগঠিত নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
জানা গেছে, এই বিশাল অঙ্কের জাল নোট তৈরির সঙ্গে বাংলাদেশের টাঁকশালের সাবেক ডিজাইনার এবং আওয়ামী কারিগররা যুক্ত রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাদের তত্ত্বাবধানে এসব নিখুঁত জাল টাকা ছাপিয়েছে এবং নিজস্ব গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তা বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
গতকাল বুধবার (১ অক্টোবর) এই ষড়যন্ত্রের বিষয়টি প্রথম সামনে আনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান। তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে এই সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হওয়ার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে। তারা এই অপতৎপরতা রুখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বুধবার বিকালে বলেন, প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোট দেশে ঢোকার অভিযোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি করার কিছু নেই, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। এসময়ে তিনি নিশ্চিত করেন, বর্তমানে পুরোনো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না। বাজারে শুধু নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু টাঁকশালে গত ১৫ বছরে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী ছিলেন এবং অনেক মেশিনারিজ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কেনা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন কাজ হলে তা ঠেকানো কঠিন।
সম্প্রতি অবসরে যাওয়া টাকা ডিজাইনের কারিগরদের নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।
এরই মধ্যে জানা যায়, জালিয়াত চক্রটি এখন আর গোপনে নেই। তারা ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রকাশ্যে জাল নোট বিক্রি করছে। আকর্ষণীয় অফার দিয়ে তারা ক্রেতা টানছে। যেমন, ১ লাখ টাকার জাল নোট মাত্র ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের জন্য ‘মানের নিশ্চয়তা’ বা ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’-র মতো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে।
অনুসন্ধানে উঠে আসে, সম্প্রতি জালিয়াত চক্র তাদের সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ‘নতুন মডেলের রঙিন প্রিন্ট’, ‘পুজোর বাজারের জন্য স্পেশাল অফার’, ‘উচ্চমানের রেপ্লিকা’ ইত্যাদি সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে জাল টাকাকে বৈধ পণ্য হিসাবে প্রচারের চেষ্টা করছে।
একটি ফেসবুক গ্রুপে (নামঃ জাল টাকা বানানোর প্রসিকিউটর) জাল নোটের ভিডিও আপলোড করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।এখানের একটি নম্বরে যোগাযোগ করা হলে, অপর প্রান্তের ব্যক্তি জানায়, তাদের কাছে ‘এ’ গ্রেডের নিখুঁত নোট রয়েছে এবং নিতে হলে আগে কিছু টাকা অগ্রিম পাঠাতে হবে। এরপর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জাল নোট পৌঁছে দেওয়া হবে। এসময় সে দাবি করে, তার নোটগুলো ‘মেশিন ছাড়া কারও বাপেরও ধরার ক্ষমতা নেই’।
আরেক ব্যবসায়ী এক ধাপ এগিয়ে বলে, তারা ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য অগ্রিম কিছু টাকা নিয়ে নোটের স্যাম্পলও পাঠায়।
এমতাবস্থায় টাকা লেনদেনের বেপারে সকলকে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলার এবং সন্দেহ হয় এমন সকল নতুন নোট লেনদেন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে জাগরণ পরিবার।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।