বিলুপ্তির ছায়া থেকে জীবনের আলো-ডিএনএ ব্যাঙ্কের বিপ্লবী মিশন

বিলুপ্তির ছায়া থেকে জীবনের আলো-ডিএনএ ব্যাঙ্কের বিপ্লবী মিশন
ছবির ক্যাপশান, বিলুপ্তির ছায়া থেকে জীবনের আলো-ডিএনএ ব্যাঙ্কের বিপ্লবী মিশন
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বিশ্বে আজ প্রতিদিনই নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন, শিকার, দূষণ সব মিলিয়ে বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। একবার কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলে পুনরুজ্জীবন করা প্রায় অসম্ভব। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে ডিএনএ ব্যাঙ্ক আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি শুধু প্রাণীর জিনগত উপাদান সংরক্ষণ করে না, বরং ভবিষ্যতে প্রজাতি পুনরুত্পাদন, জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

ডিএনএ ব্যাঙ্ক কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?

ডিএনএ ব্যাঙ্ক হলো একটি অত্যাধুনিক জিন সংরক্ষণাগার, যেখানে বিপন্ন প্রাণীর ডিএনএ, শুক্রাণু, ডিম্বাণু, ভ্রূণ এবং অন্যান্য টিস্যু সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত জিনগত উপাদান ভবিষ্যতে প্রজাতি পুনরুজ্জীবন, জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যায়।

১. নমুনা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ: চিড়িয়াখানা, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বা প্রকৃত বনাঞ্চল থেকে বিপন্ন প্রাণীর জৈবিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শুক্রাণু, ডিম্বাণু, ভ্রূণ, ত্বক বা রক্তের মতো উপাদান সংগ্রহের পরে তা বিশ্লেষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

২. হিমায়িত সংরক্ষণ: সংগ্রহ করা নমুনাগুলো তরল নাইট্রোজেনে (-১৯৬°C) অতি-হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এতে জিনগত উপাদান দীর্ঘকালীন, প্রায় অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে।

৩. জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ: সংরক্ষিত ডিএনএ থেকে প্রজাতির জিনোম বিশ্লেষণ করা যায়।

জেনেটিক বৈচিত্র্য, সম্ভাব্য রোগ প্রবণতা এবং অভিযোজনের তথ্য পাওয়া যায়।

৪. ভবিষ্যৎ প্রজনন ও পুনরুজ্জীবন: প্রয়োজনে সংরক্ষিত ডিএনএ, শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ব্যবহার করে বিপন্ন প্রজাতির কৃত্রিম প্রজনন করা সম্ভব। বিলুপ্তির আশঙ্কা থাকা প্রজাতি পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়ানো যায়।

ডিএনএ ব্যাঙ্কের গুরুত্ব:

☞ বিলুপ্তির ঝুঁকি মোকাবেলা: বিপন্ন প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করে।

☞ জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা: সংরক্ষিত ডিএনএ ব্যবহার করে প্রজাতির জিনগত বৈচিত্র্য বজায় রাখা যায়। বিভিন্ন প্রজাতির অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

☞ ভবিষ্যৎ প্রজনন ও পুনরুজ্জীবন: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ বা পরিবেশগত পরিবর্তনের পর প্রজাতি পুনরায় বাঁচানো সম্ভব।

☞ গবেষণা ও শিক্ষা: বিজ্ঞানীরা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য, রোগপ্রতিরোধ এবং অনুকূল অভিযোজন নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা জিনোম বিশ্লেষণ ও প্রজনন প্রক্রিয়ার প্রায়োগিক শিক্ষা পেতে পারেন।

বাস্তব উদাহরণ-

ভারতের দার্জিলিং চিড়িয়াখানা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ডিএনএ ব্যাঙ্ক স্থাপন করেছে। এখানে সংরক্ষিত আছে:

১. রেড পান্ডা

২. স্নো লেপার্ড

৩. সাইবেরিয়ান টাইগার

৪. মিশমি টাকিন

এই সংরক্ষিত ডিএনএ, জিনোম ও গ্যামেট ব্যবহার করে প্রজাতি পুনরুত্পাদন, জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং ভবিষ্যতের প্রজাতি সংরক্ষণ সম্ভব।

বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সফল উদাহরণ দেখা যায়:

⇨ যুক্তরাষ্ট্রের স্যামসন সংরক্ষণাগার: অশ্ব এবং বাঘ প্রজাতি সংরক্ষণ।

⇨ অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড জিন ব্যাংক: উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ই সংরক্ষিত।

ডিএনএ ব্যাঙ্কের প্রযুক্তি শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্যও অপরিহার্য। বিলুপ্তির পথে থাকা কোনো প্রজাতিকে সংরক্ষিত জিন ব্যবহার করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও, গবেষণার মাধ্যমে নতুন প্রজাতি শনাক্তকরণ, রোগ প্রতিরোধ এবং অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানো যায়। এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য "জেনেটিক নিরাপত্তা নেট" হিসেবে কাজ করছে।

ডিএনএ ব্যাঙ্ক কেবল একটি সংরক্ষণাগার নয়, এটি বন্যপ্রাণীর ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো। এটি বিলুপ্তির পথে থাকা প্রজাতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে, জেনেটিক বৈচিত্র্য রক্ষা করতে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলায় নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই সমন্বয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অবদান রাখছে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ