বই পড়া শুধু বিনোদন নয়! জানুন কীভাবে এটি আপনার মস্তিষ্ক ও সমাজিক জীবন বদলে দিতে পারে

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
বই মানুষের জ্ঞান, সৃজনশীলতা, মানসিক বিকাশ এবং সামাজিক সচেতনতার অন্যতম প্রধান উৎস। যদিও আমাদের মধ্যে অনেকেই ভাবি, 'একজন মানুষ জীবনে কত বই পড়ে?' এটির কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এটি নির্ভর করে ব্যক্তিগত পঠন অভ্যাস, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট, এবং সামাজিক ও পেশাগত পরিবেশের ওপর। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, একজন গড় মানুষ যদি নিয়মিত বই পড়ে, তাহলে তার জীবনে পড়া বইয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং এটি তার মানসিক ও জ্ঞানীয় বিকাশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক তথ্যানুসারে,
Above & Beyond ABA Therapy অনুসারে, গড় একজন আমেরিকান বছরে ১২টি বই পড়ে। তবে প্রায় ৬৫% আমেরিকান বছরে একটিও বই পড়ে না।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২% কলেজ স্নাতক কলেজ জীবনের পর আর কোনো বই পড়ে না।
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে গড়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক বছরে ২০–৩০টি বই পড়েন। গ্রামীণ এলাকায় গড় সংখ্যা প্রায় ৫–১০টি বই। পঠনসংস্কৃতি, বইয়ের সহজলভ্যতা, সামাজিক উৎসাহ ও বিনোদনের বিকল্পগুলো পঠনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে।
বয়সভিত্তিক পাঠাভ্যাস:
⇨ শিশু ও কিশোর (৫–১৮ বছর): গল্প, রূপকথা, শিক্ষামূলক বই।
⇨ যৌবন ও প্রাপ্তবয়স্ক (১৮–৫০ বছর): গবেষণা, প্রবন্ধ, পেশাগত ও আত্মউন্নয়নমূলক বই।
⇨ বৃদ্ধ (>৫০ বছর): ইতিহাস, আত্মজীবনী, তথ্যভিত্তিক বই।
শিক্ষাগত ও সামাজিক প্রভাব:
উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা বেশি বই পড়েন এবং তাদের মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত হয়।
নিয়মিত পড়াশোনা পেশাগত দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়।
বই পড়ার মানসিক ও শারীরিক উপকারিতা
☞ মানসিক চাপ হ্রাস: রাতের আগে বই পড়া স্ট্রেস প্রায় ৬৫–৭০% কমাতে সাহায্য করে। বই পড়া মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত করে।
☞ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: নিউরোসায়েন্স গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়া মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে সক্রিয় রাখে। মনোযোগ, স্মৃতি, সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তা বৃদ্ধি পায়।
☞ ভাষা ও শব্দভান্ডার উন্নয়ন: পড়াশোনার মাধ্যমে বাক্যগঠন, লিখনশৈলী এবং ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
☞ জ্ঞান ও সামাজিক সচেতনতা: ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত বই পড়া দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে। সামাজিক ও পরিবেশগত সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
☞ স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য: দৈনিক বা নিয়মিত বই পড়া স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়। হতাশা, উদ্বেগ ও একাকীত্ব কমাতে সাহায্য করে।
☞ সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধান: গল্প, উপন্যাস বা গবেষণামূলক বই পড়ার মাধ্যমে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনী চিন্তা বিকাশিত হয়।
একজন মানুষের জীবনে বই পড়ার সংখ্যা যতই পরিবর্তনশীল হোক না কেন, নিয়মিত বই পড়া মানসিক, সামাজিক ও জ্ঞানীয় বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটি মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি করে, এবং নতুন ধারণা ও সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সমীক্ষা প্রমাণ করে, নিয়মিত বই পড়া শুধু বিনোদন নয় এটি মানসিক সুস্থতা, সামাজিক সচেতনতা এবং ব্যক্তিত্বের সমৃদ্ধির এক অমূল্য সম্পদ।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।