টক-মিষ্টি স্বাদ আর সুগন্ধি মিশ্রণে প্যাশন ফ্রুট—শরীর ও মনের যত্নে এক অমূল্য ফল

টক-মিষ্টি স্বাদ আর সুগন্ধি মিশ্রণে প্যাশন ফ্রুট—শরীর ও মনের যত্নে এক অমূল্য ফল
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গরমের দিনে এক ফালি প্যাশন ফ্রুট কেটে খাওয়া শুধু মুখে স্বাদ নয়, বরং শরীর ও মনের জন্য এক অমূল্য প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উৎস। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি সুগন্ধি এবং স্বাস্থ্যকর গুণে ভরপুর, যা বিশেষভাবে স্ট্রেস কমানো, মানসিক প্রশান্তি এবং পুষ্টির যোগান দেওয়ায় কার্যকর। প্যাশন ফ্রুট মূলত প্যাসিফ্লোরা পরিবারের একটি ফল, যা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত হলেও বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াতে চাষ হয়। এর সুগন্ধি, উজ্জ্বল বর্ণ এবং টক-মিষ্টি স্বাদ মানুষকে প্রাকৃতিকভাবে আকৃষ্ট করে।

উৎপত্তিস্থল ও মৌসুম:

⇨ জন্মস্থান: দক্ষিণ আমেরিকার উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চল। মূলত দক্ষিণ ব্রাজিল থেকে উত্তর আর্জেন্টিনা পর্যন্ত বিস্তৃত।

⇨ রঙ ও প্রকারভেদ: বেগুনি (Purple Passion Fruit) এবং হলুদ (Yellow Passion Fruit)। উভয় প্রকারের ভেতরের রসপূর্ণ থলিগুলি সুগন্ধি এবং স্বাদে সমৃদ্ধ।

⇨ মৌসুম: প্রধানত শীতকাল থেকে বসন্তকাল (জুন থেকে অক্টোবর) এ ফসল ফলায়। তবে কিছু অঞ্চলে বছরের অন্যান্য সময়েও পাওয়া যায়।

গুণাগুণ:

⇨ স্ট্রেস ও মানসিক চাপ হ্রাস:প্যাশন ফ্রুটে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল মস্তিষ্কের কোর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা স্ট্রেস হ্রাসে কার্যকর। এছাড়া, ফলের প্রাকৃতিক সুগন্ধি মানসিক প্রশান্তি দেয়।


⇨ হৃদরোগ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:প্যাশন ফ্রুটে পটাসিয়াম ও ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

⇨ ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য:ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে, দাগ ও বয়সের চিহ্ন হ্রাসে সাহায্য করে। চুলের জন্য এটি প্রাকৃতিক পুষ্টি সরবরাহ করে।

⇨ পাচনশক্তি ও হজম:প্যাশন ফ্রুটের ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখে।

⇨ ঘুম ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য:প্যাশন ফ্রুটে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন B কমপ্লেক্স স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে এবং ঘুমের মান উন্নত করে।


ব্যবহার ও প্রস্তুতির কৌশল

১। সরাসরি খাওয়া: কেটে সরাসরি ফলের ভিতরের জেলি-জাতীয় অংশ খাওয়া।

২। জুস ও স্মুদি: প্যাশন ফ্রুট জুস বা স্মুদি বানাতে ব্যবহার করলে স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই বজায় থাকে।

৩। ডেসার্ট ও সালাডে ব্যবহার: টক-মিষ্টি স্বাদের কারণে এটি ডেসার্ট বা ফলের সালাডে ব্যবহার করা যায়।

৪। চা ও অ্যারোমাথেরাপি: প্যাশন ফ্রুটের গন্ধ স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে, তাই হালকা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে মানসিক প্রশান্তি পেতে পারেন।

প্যাশন ফ্রুটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল সমৃদ্ধ উপাদানগুলো শরীরে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল কমিয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ হ্রাস, হৃদরোগ প্রতিরোধ এবং বয়সজনিত ক্ষয় রোধে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি ও পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে সহায়ক।

টক-মিষ্টি স্বাদ, সুগন্ধি এবং স্বাস্থ্যকর পুষ্টিগুণে প্যাশন ফ্রুট শুধু স্বাদের আনন্দই নয়, বরং শরীর ও মনকে শক্তিশালী ও প্রশান্ত রাখার প্রাকৃতিক উপায়। স্ট্রেস কমানো, ঘুমের মান উন্নত করা, হৃদরোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং ত্বকের যত্ন—সবকিছুই এই ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী ফল থেকে পাওয়া যায়। অতএব, দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্যাশন ফ্রুট অন্তর্ভুক্ত করা মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য এক সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ