বয়স বাড়লেও তারুণ্যের ছোঁয়া!—নারীর জন্য "হেলদি এজিং"-এর চমকপ্রদ তথ্য!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
সময় থেমে থাকে না। প্রতি বছর বয়সের ঘড়িতে নতুন সংখ্যা যোগ হয়, কিন্তু সেই সংখ্যা আমাদের শরীর ও মনের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের জীবনধারার ওপর। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে বয়সের সাথে শরীরে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলো কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও জড়িয়ে থাকে। মেনোপজ, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি বা ত্বকের বার্ধক্য—এসবই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সুখবর হলো, সঠিক যত্ন ও বৈজ্ঞানিক জীবনধারায় এই পরিবর্তনগুলোকে ধীর করা যায়, এমনকি সুস্থ ও প্রাণবন্তভাবে বয়সকে বরণ করা সম্ভব।
বয়স বৃদ্ধির সাথে নারীর শরীরে পরিবর্তন-
⇨ হরমোন পরিবর্তন ও মেনোপজ: ৪৫–৫৫ বছর বয়সে মেনোপজ শুরু হয়, যেখানে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে ঘুমের সমস্যা, গরম লাগা, মুড পরিবর্তন, ওজন বৃদ্ধি এবং হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে।
⇨ হাড় ও পেশীর দুর্বলতা: বয়স বাড়লে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম কমে যায়। অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। একইসাথে মাংসপেশী ক্ষয় হয়ে শরীর দুর্বল হয়।
⇨ ত্বক ও সৌন্দর্যের প্রভাব: কোলাজেন উৎপাদন কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক, ঢিলে ও বলিরেখাযুক্ত হয়। সূর্যের আলো ও দূষণ এই প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করে তোলে।
⇨ হৃদ্যন্ত্রের ঝুঁকি: মেনোপজের পর এস্ট্রোজেন কমে যাওয়ায় নারীদের হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল সমস্যার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
⇨ স্মৃতিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য: বয়সের সাথে মস্তিষ্কের নিউরন কমে যায়, যার ফলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থাকলে সমস্যা আরও বাড়ে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কৌশল:
☞ সুষম খাদ্যাভ্যাস: প্রতিদিনের খাবারে ৫ ধরনের ফল ও শাকসবজি রাখুন। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম) পেশী ও হাড় রক্ষায় অপরিহার্য। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (স্যামন মাছ, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড) হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হাড় মজবুত করে। চিনি, অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দিন।
☞ শরীরচর্চা ও সক্রিয়তা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইক্লিং বা সাঁতার হৃদ্যন্ত্রের জন্য ভালো। যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে। হালকা ওয়েট ট্রেনিং পেশী ও হাড় শক্ত করে, বার্ধক্য ধীর করে।
☞ ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম শরীরের হরমোন ব্যালান্সে সাহায্য করে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য মেডিটেশন, প্রার্থনা বা শখের কাজ করুন। সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
☞ পানি ও হাইড্রেশন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান ত্বক আর্দ্র রাখে, কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং হজম উন্নত করে।
বয়স অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা-
⇨ ৩০–৪০ বছর: ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার, থাইরয়েড টেস্ট।
⇨ ৪০–৫০ বছর: ম্যামোগ্রাম, কোলেস্টেরল টেস্ট, চোখ ও দাঁতের পরীক্ষা।
⇨ ৫০–৬০ বছর: বোন ডেনসিটি টেস্ট, কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিং।
⇨ ৬০-এর পর: হার্ট চেকআপ, ভ্যাকসিনেশন (ফ্লু, নিউমোনিয়া), কগনিটিভ ফাংশন টেস্ট।
বয়স বাড়া থামানো সম্ভব নয়, কিন্তু বয়সকে কেমনভাবে মোকাবিলা করবেন তা পুরোপুরি আপনার হাতে। "হেলদি এজিং" মানে হলো বয়সের সাথে সাথে নিজেকে যত্নে রাখা, শরীরকে ফিট রাখা এবং মনকে প্রশান্ত রাখা। সঠিক খাবার, শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, পানি পান, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাই নারীর জন্য সুস্থ ও সুন্দর বার্ধক্যের মূল চাবিকাঠি। বয়স শুধু সংখ্যা, আসল সম্পদ হলো আপনার সুস্থতা। যত্ন নিলে বয়স নয়, বরং আপনার অভ্যাসই আপনাকে তরুণ ও প্রাণবন্ত রাখবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।