সৌরজগতের রহস্য ছড়িয়ে যাচ্ছে ছোটো গ্রহাণুর বরফে বিজ্ঞানীরা বলছেন অবাক করা তথ্য!

সৌরজগতের রহস্য ছড়িয়ে যাচ্ছে ছোটো গ্রহাণুর বরফে বিজ্ঞানীরা বলছেন অবাক করা তথ্য!
ছবির ক্যাপশান, সৌরজগতের রহস্য ছড়িয়ে যাচ্ছে ছোটো গ্রহাণুর বরফে বিজ্ঞানীরা বলছেন অবাক করা তথ্য!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

সৌরজগত কেবল গ্রহ, উপগ্রহ ও সূর্যের সমষ্টি নয়। এখানে রয়েছে অসংখ্য ছোটো মহাজাগতিক বস্তু, যা আকারে ক্ষুদ্র হলেও বৈজ্ঞানিক গুরুত্বে অপরিসীম। এই ছোটো বস্তুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অ্যাস্টেরয়েড (Asteroid) এবং ধূমকেতু (Comet)।

অ্যাস্টেরয়েড মূলত পাথর ও ধাতু দিয়ে গঠিত এবং এর বেশিরভাগই মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বলয়ে অবস্থান করে। অন্যদিকে, ধূমকেতু ধুলো, বরফ এবং গ্যাসের মিশ্রণে তৈরি, যা সূর্যের কাছে এলে গ্যাস নির্গত করে একটি উজ্জ্বল লেজ বা টেল তৈরি করে। এই ক্ষুদ্র বস্তুগুলো কেবল সৌরজগতের উৎপত্তি ও বিবর্তন বোঝাতে সাহায্য করে না, বরং প্রাচীনকালে পৃথিবীতে জল এবং জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক যৌগ পৌঁছে দেওয়ায় এদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য

অ্যাস্টেরয়েড: মূলত পাথর ও ধাতু দিয়ে গঠিত। সৌরজগতের মূল গ্রহগুলোর পাশে থাকা অবশিষ্ট পদার্থ থেকে তৈরি, যা গ্রহগুলোর মাধ্যাকর্ষণ টানের কারণে একত্রিত হতে পারেনি। প্রায়শই উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অধিকাংশ অ্যাস্টেরয়েড মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী গ্রহাণু বেল্টে থাকে।

ধূমকেতু: ধুলো, বরফ ও গ্যাসের মিশ্রণে গঠিত। সূর্যের কাছে এলে বরফ বাষ্পীভূত হয়ে গ্যাস নির্গত করে, যা একটি কমা এবং উজ্জ্বল টেল তৈরি করে। প্রাচীনকালে পৃথিবীতে জল এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক যৌগ নিয়ে আসতে পারে।

প্রভাব ও গুরুত্ব

অ্যাস্টেরয়েড: সৌরজগতের প্রাথমিক পদার্থ বোঝায়। এটি বৃহৎ সংঘর্ষের সময় পৃথিবীতে প্রভাব ফেলতে পারে।এছাড়া, প্রাথমিক পদার্থের রক ও ধাতুর সংমিশ্রণ সৌরজগতের বিবর্তন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ধূমকেতু: বরফ ও ধূলির মিশ্রণ প্রাথমিক সৌরগোলকীয় পদার্থের ইতিহাস প্রকাশ করে। সূর্যের কাছে এলে নির্গত গ্যাস এবং টেল বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ধূমকেতু প্রাচীনকালে পৃথিবীতে জল এবং জৈব যৌগ পৌঁছে দিতে সক্ষম।

গবেষণা ও মহাকাশ মিশন-

Rosetta Mission (ESA): ধূমকেতু 67P/Churyumov–Gerasimenko পর্যবেক্ষণ করে গঠন, রাসায়নিক উপাদান ও আচরণ বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেছে। মহাকাশযানগুলো অ্যাস্টেরয়েড ও ধূমকেতুর কক্ষপথ, গঠন এবং উৎস সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।

NASA-এর OSIRIS-REx মিশন বেনু অ্যাস্টেরয়েড থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে, যা সৌরজগতের প্রাথমিক পদার্থ বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়।

মহাজাগতিক প্রভাব ও সতর্কতা:

অ্যাস্টেরয়েড ও ধূমকেতু পৃথিবীর কাছাকাছি আসতে পারে। কিছু গ্রহাণু বা ধূমকেতুর অংশ পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। তাই তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। এসব পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের মহাকাশ খনি, গ্রহাণু সংরক্ষণ এবং পৃথিবীর নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যাস্টেরয়েড ও ধূমকেতু দৃশ্যত ক্ষুদ্র হলেও সৌরজগতের ইতিহাস, প্রাথমিক পদার্থ এবং মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। আধুনিক মহাকাশ মিশন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা আমাদের এই ছোটো বস্তুগুলোর গঠন, আচরণ এবং প্রভাব সম্পর্কে আরও গভীর তথ্য প্রদান করছে।

অতএব, অ্যাস্টেরয়েড ও ধূমকেতু আমাদের সৌরজগতের ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রেরক, যা আমাদের জন্ম, ইতিহাস এবং ভবিষ্যৎ অভিযানের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ