স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল যা নিজেই মানিয়ে নেয় পরিবেশের সঙ্গে-অবাক করা এক বৈজ্ঞানিক রহস্য!

স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল যা নিজেই মানিয়ে নেয় পরিবেশের সঙ্গে-অবাক করা এক বৈজ্ঞানিক রহস্য!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বা পদার্থবিজ্ঞান-ভিত্তিক উপাদান গবেষণার ভূমিকা অপরিসীম। এক সময় যেখানে পাথর, ধাতু কিংবা প্লাস্টিক ছিল প্রধান উপকরণ, সেখানে আজকের যুগে আমরা কথা বলছি এমন সব উপাদানের যেগুলো নিজে নিজে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, পরিবেশ অনুযায়ী রূপ বদলাতে পারে, এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে। এগুলোই হচ্ছে আধুনিক স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল।

স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল কী?

স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল হলো এমন উপাদান, যেগুলো তাপমাত্রা, আলো, আর্দ্রতা, চাপ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মতো পরিবেশগত প্রভাবের প্রতি দ্রুত সাড়া দেয় এবং তার সাথে মানিয়ে নেয়। সাধারণ উপাদান শুধু ব্যবহারযোগ্য থাকে, কিন্তু স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল সক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

 

নতুন ধরণের স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল ও তাদের বৈশিষ্ট্য

⇨ শেপ মেমোরি অ্যালয় (Shape Memory Alloys - SMA):
এ ধরনের ধাতব অ্যালয় গরম হলে আবার নিজের পূর্বের আকারে ফিরে যায়। চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, এয়ারক্রাফট উইং বা অটোমোবাইলে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
 

⇨ পিজোইলেকট্রিক ম্যাটেরিয়াল:
চাপ বা কম্পন পড়লে এরা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। আবার উল্টোভাবে বিদ্যুৎ দিলে এরা নিজের আকার বদলায়। ফলে এগুলো সেন্সর, মাইক্রোফোন, এমনকি এনার্জি হারভেস্টিং ডিভাইসে ব্যবহার হচ্ছে।
 

⇨ সেল্ফ-হিলিং ম্যাটেরিয়াল:
এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিজেরাই মেরামত করে ফেলে। যেমন, রাসায়নিক যৌগ ভেতরে থাকা ক্ষুদ্র ক্যাপসুল ফেটে গিয়ে ফাটল বা স্ক্র্যাচ ভরাট করে দেয়। ভবিষ্যতে এটি স্মার্টফোন স্ক্রিন থেকে শুরু করে সড়ক ও সেতুর আয়ু বাড়াতে কাজে লাগবে।
 

⇨ থার্মোক্রোমিক ও ফটো ক্রোমিক ম্যাটেরিয়াল:
আলো বা তাপের প্রভাবে রঙ পরিবর্তন করে। আধুনিক চশমা, সুরক্ষা সরঞ্জাম ও আর্কিটেকচারে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হচ্ছে।
 

⇨ বায়োমিমেটিক স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল:
প্রকৃতির অনুকরণে তৈরি এসব উপাদান যেমন-পদ্মপাতার মতো জলবিরোধী (superhydrophobic) পৃষ্ঠ, বা গিরগিটির মতো রঙ পরিবর্তনক্ষম কোটিং।
 

⇨ ম্যাগনেটোরেসপন্সিভ ম্যাটেরিয়াল:
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে আকার বা বৈশিষ্ট্য বদলায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে ওষুধ টার্গেট করে পৌঁছে দিতে এর ব্যবহার বাড়ছে।
 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সম্ভাবনা:

◑ চিকিৎসা: ক্ষুদ্র রোবট, স্মার্ট ইমপ্ল্যান্ট, টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং।

◑ পরিবহন: স্বয়ংক্রিয় এয়ারক্রাফট উইং, কম ফুয়েল খরচের গাড়ি।

◑ এনার্জি: সূর্যের আলো বা কম্পন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

◑ দৈনন্দিন জীবন: স্বয়ংক্রিয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পোশাক, ভাঙলেই নিজে সারিয়ে তোলা মোবাইল স্ক্রিন।

 

এই স্মার্ট ম্যাটেরিয়ালগুলির ভেতরে মাইক্রো-স্ট্রাকচারাল পরিবর্তন ঘটে, যেমন-

⇨ ধাতুর ক্রিস্টাল স্ট্রাকচার গরম হলে আবার আগের রূপে ফেরা।

⇨ পলিমারের ভেতরে সংরক্ষিত রাসায়নিক সক্রিয় হয়ে ক্ষত ভরাট করা। 

⇨ ন্যানোস্কেল স্তরে ইলেকট্রন চলাচল বদলে যাওয়া।
 

এই প্রক্রিয়াগুলিই এগুলোকে "স্মার্ট" করে তোলে।
 

ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের অগ্রগতিতে স্মার্ট ম্যাটেরিয়াল আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে এক অসাধারণ পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এমন প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে, যা শুধু যন্ত্রপাতি উন্নত করবে না, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ, নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করে তুলবে। এক সময়ের কল্পবিজ্ঞান—আজকের বাস্তব বিজ্ঞান।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ