এক চিমটে-তেই মিলল স্বাস্থ্য, রোগপ্রতিরোধ ও সৌন্দর্যের গোপন খজানা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
আমাদের আশেপাশে এমন কিছু উপাদান আছে, যেগুলো আমরা অনেক সময় অবহেলা করি, অথচ এর ভেতর লুকিয়ে থাকে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। তিসি বীজ (Flaxseed) তারই একটি উদাহরণ। অতি ছোট এই বাদামি রঙের দানা এখন বিজ্ঞানীরা স্বীকৃতি দিয়েছেন "ফাংশনাল ফুড" হিসেবে। অর্থাৎ এটি শুধু পেট ভরায় না, বরং শরীরকে ভেতর থেকে রক্ষা করে, নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিতে ভরপুর ক্ষুদ্র এই দানা!
তিসি বীজকে প্রায়ই বলা হয় "শক্তির খনি"। কারণ এতে রয়েছে-
⇨ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (ALA): হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য অপরিহার্য।
⇨লিগন্যানস: উদ্ভিজ্জ যৌগ, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
⇨ডায়েটারি ফাইবার: হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
⇨ উচ্চ প্রোটিন ও ভিটামিন-খনিজ: বিশেষত ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স।
এই সংমিশ্রণ তিসিকে করে তুলেছে একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যকর খাবার।
হৃদযন্ত্র ও রক্তচাপের জন্যও উপকারী!
আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তিসি বীজ খাওয়া রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তনালী নমনীয় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক!
তিসির ফাইবার ও বিশেষ উদ্ভিজ্জ যৌগ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে থাকে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী হতে পারে।
ওজন কমাতে কার্যকর!
তিসি বীজে থাকা ফাইবার দ্রুত পেট ভরার অনুভূতি তৈরি করে। এতে ক্ষুধা কমে যায় এবং অযাচিত ক্যালরি গ্রহণ রোধ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডায়েটে তিসি যুক্ত করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
হজমশক্তি উন্নত করে!
তিসি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এক ধরনের জেলি-জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যাকে মিউসিলেজ বলা হয়। এটি অন্ত্রে লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্যে ভূমিকা-
তিসি বীজে থাকা ওমেগা-৩ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের প্রদাহ কমায়, ব্রণ ও শুষ্কতা প্রতিরোধ করে। একইসাথে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক-
তিসির লিগন্যানস বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো হরমোন-নির্ভর ক্যানসার যেমন স্তন ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মত দেন। যদিও এটি শতভাগ প্রতিরোধ নয়, তবে ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর।
কীভাবে খাওয়া উচিত?
তিসি বীজ গুঁড়ো করে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো, কারণ অক্ষত দানা হজম না হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ১–২ চা চামচ গুঁড়ো তিসি দই, স্যুপ, স্মুদি, সালাদ বা রুটির সাথে খাওয়া যেতে পারে। তিসির তেলও ব্যবহার করা হয় সালাদ ড্রেসিং হিসেবে, তবে রান্নায় ব্যবহার করা ঠিক নয়, কারণ উচ্চ তাপে এর গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
সতর্কতা:
◑ অতিরিক্ত তিসি খাওয়া হজমের সমস্যা, ফাঁপা বা গ্যাসের সৃষ্টি করতে পারে।
◑ গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অল্প পরিমাণে নিয়মিত ডায়েটে যুক্ত করলে এটি হতে পারে সুস্থ জীবনের এক অমূল্য সঙ্গী।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।