চিপ ছাড়াই কম্পিউটার!জীবাণু চালিত প্রসেসর প্রযুক্তিকে দিচ্ছে নতুন দিশা!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানব সভ্যতার ইতিহাসে কম্পিউটার সবসময়ই ইলেকট্রনিক সার্কিট, সিলিকন চিপ ও তড়িৎ সংকেতের উপর নির্ভর করে এসেছে। কিন্তু বিজ্ঞান এখন এমন এক সীমারেখায় দাঁড়িয়েছে যেখানে কম্পিউটার আর কেবল ইলেকট্রনিক নয় এটি হতে পারে জীবাণু বা মাইক্রোবস দ্বারা চালিত, অর্থাৎ বায়োলজিক্যাল প্রসেসর। এই প্রযুক্তি কেবল কল্পকাহিনী নয়; এটি নতুন প্রজন্মের কম্পিউটিং, ডেটা প্রসেসিং এবং এনার্জি সাশ্রয়ের সম্ভাবনার দরজা খুলছে।
জীবাণু কম্পিউটার যেভাবে কাজ করে-
বায়োলজিক্যাল প্রসেসরে ব্যবহৃত হয় মাইক্রোবিয়াল বা ব্যাকটেরিয়া-ভিত্তিক সেলস, যারা রসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।
মূল ধারণা হলো- মাইক্রোবসরা ইলেকট্রিক্যাল সংকেত উৎপন্ন করে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে লজিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কিছু ব্যাকটেরিয়া যখন আলাদা আলাদা রাসায়নিক পরিবেশে থাকে, তখন তারা ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল তৈরি করে।
এই সিগন্যালগুলোকে ডিজিটাল লজিকের মতো ব্যবহার করে AND, OR, NOT অপারেশন সম্পন্ন করা সম্ভব। ফলে, একটি ছোট পাত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া অনেক জটিল হিসাব করতে পারে একধরনের মাইক্রোবিয়াল প্রসেসর।
সুবিধা :
⇨ এনার্জি সাশ্রয়: ব্যাকটেরিয়া কম্পিউটার ইলেকট্রনিক সার্কিটের তুলনায় অনেক কম শক্তিতে কাজ করে।
⇨ অতি ক্ষুদ্র আকারে হিসাব: কয়েক মিলিমিটার মাইক্রোবিয়াল চেম্বারে জটিল তথ্য প্রক্রিয়া করা সম্ভব।
⇨পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি: এটি ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমায়, এবং কম তাপ উৎপন্ন করে।
⇨জীবন্ত কম্পিউটার: ব্যাকটেরিয়া নিজেই বৃদ্ধি পায় ও নিজস্ব রাসায়নিক চক্র বজায় রাখে, ফলে কম্পিউটার "সেলফ-রিপেয়ারিং" সক্ষমতা পেতে পারে।
University of Edinburgh এবং MIT-এর গবেষকরা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে ছোট লজিক গেট তৈরি করেছেন। এক গবেষণায়, Escherichia coli (E. coli) ব্যবহার করে একটি সাধারণ সংখ্যা গণনার লজিক প্রসেস সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে বায়োলজিক্যাল প্রসেসর জটিল সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, যেমন তথ্য সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট আউটপুট তৈরি করা।
সম্ভাবনা:
◑ মেডিকেল ডিভাইস: রোগ শনাক্তকরণ বা বায়োলজিক্যাল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার।
◑ পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: দূষণ বা রাসায়নিক পরিবর্তন রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ।
◑ সুপারকম্পিউটিং: প্রচলিত কম্পিউটারের শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবিয়াল প্রসেসর।
◑ জীবন্ত রোবট: যন্ত্র এবং জীবনের সংমিশ্রণে নতুন রোবট প্রযুক্তি।
চ্যালেঞ্জ:
⇨ব্যাকটেরিয়া সংরক্ষণ ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
⇨ ডেটা প্রক্রিয়াকরণের নির্ভুলতা বৃদ্ধি।
⇨ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও মৃত্যুর প্রভাব সামলানো।
বায়োলজিক্যাল প্রসেসর কেবল ভবিষ্যতের কল্পনা নয়, এটি বাস্তব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত। মানব সভ্যতা একসময় কম্পিউটারকে সিলিকন চিপের সঙ্গে যুক্ত করেছিল, আর এখন আমরা কম্পিউটারকে জীবন্ত কোষের সঙ্গে সংযুক্ত করার দিগন্তে পৌঁছেছি। বিজ্ঞান যখন জীবাণু দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করতে সক্ষম হবে, তখন এনার্জি সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, এবং আরও মানবিক ডিজিটাল উদ্ভাবন সম্ভব হবে। এটি কেবল প্রযুক্তি নয়—একটি জীবন্ত বিপ্লব, যেখানে জীবন ও যন্ত্র একত্রিত হয়ে তথ্যের নতুন জগতের পথ দেখাবে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।