মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): কারণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ দিক

মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): কারণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ দিক
ছবির ক্যাপশান, মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): কারণ, ঝুঁকি ও প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ দিক
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

মূত্রনালির সংক্রমণ বা Urinary Tract Infection (UTI) হলো এমন এক স্বাস্থ্য সমস্যা যা মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে। এটি শুধু অস্বস্তি নয়, যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে কিডনি বা রক্তে সংক্রমণের মতো গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, UTI শুধু জীবাণুর সমস্যা নয়, বরং এটি মানব দেহের ইমিউন সিস্টেম, ব্লাডার ফাংশন এবং জীবাণু-শরীর প্রতিক্রিয়ার জটিল খেলা। নারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও, পুরুষ ও শিশুদের মধ্যেও এটি সাধারণ।

UTI-এর প্রকারভেদ ও কারণ:

UTI মূলত মূত্রনালির বিভিন্ন অংশে সংক্রমণের কারণে ঘটে।

☞ কিডনির সংক্রমণ (Pyelonephritis): সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলে।

লক্ষণ: উচ্চ জ্বর, কোমরে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা।

☞ ব্লাডার সংক্রমণ (Cystitis): সবচেয়ে সাধারণ UTI।

লক্ষণ: ঘন ঘন প্রস্রাব, জ্বালা, কমফোর্ট কমে যাওয়া

☞ ইউরেথ্রা সংক্রমণ (Urethritis): প্রস্রাবনালির সংক্রমণ।

লক্ষণ: প্রস্রাবের সময় পোড়া বা ব্যথা।

UTI-এর ব্যাকটেরিয়া শুধু উপস্থিতি নয়, অ্যাক্টিভ ভঙ্গিতে মূত্রনালিতে আটকে থেকে সংক্রমণ চালায়। E. coli ফিমব্রিয়া বা ছোট আঁচিল ব্যবহার করে ইউরেথ্রার প্রাচীরে আটকায়।

এটি ব্লাডার ও ইউরিনারি ট্র্যাক্টে "বায়োফিল্ম" তৈরি করে, যা ব্যাকটেরিয়াকে শক্তিশালী করে।

বায়োফিল্মের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ ক্ষমতা পায়। মস্তিষ্ক ও শরীরের সিগন্যাল অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়া নিজস্ব রাসায়নিক সংকেত পাঠিয়ে কোষের বৃদ্ধি ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে UTI-এর সংক্রমণ কেবল বাহ্যিক নয়, বরং এক প্রকার "সিস্টেমেটিক জীবাণু খেলা"।

লক্ষণ যা অবহেলা করা উচিত নয়:

⇨ ঘন ঘন প্রস্রাব বা হঠাৎ প্রস্রাবের তীব্র ইচ্ছা

⇨প্রস্রাবের সময় পোড়া বা ব্যথা

⇨ প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি বা মেঘলা রঙ

⇨ কোমর বা নীচু পেটে ব্যথা

⇨কিডনি সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগা

⇨ নারীদের ক্ষেত্রে, UTI কখনও নিঃশব্দও থাকতে পারে,হালকা জ্বালা বা চাপ অনুভূতিই একমাত্র লক্ষণ।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:

চিকিৎসা মূলত দুইভাবে: সংক্রমণ রোধ এবং জীবনধারার পরিবর্তন।

⇨ অ্যান্টিবায়োটিক: ডাক্তার নির্ধারিত কোর্স শেষ করা জরুরি।

⇨ প্রচুর পানি পান: প্রতিদিন ২–৩ লিটার পানি, যা ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে বের করতে সাহায্য করে।

⇨ হাইজিন মেনে চলা: টয়লেটের পর সঠিক ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা।

⇨ প্রস্রাব আটকে না রাখা

⇨ যৌনক্রিয়া পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা

⇨ ডায়েট ও প্রোবায়োটিক

⇨ ক্র্যানবেরি, ব্ল্যাককারেন্ট, দই বা প্রোবায়োটিক যেগুলো ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ব্যাকটেরিয়াল ভারসাম্য বজায় রাখে।

নতুন গবেষণা বলছে, কিছু প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীকে আক্রমণকারী ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। ক্র্যানবেরি ও ব্ল্যাককারেন্টের অ্যান্টি-অ্যাডহেসিভ প্রভাব E. coli-এর ফিমব্রিয়া আটকাতে সাহায্য করে। বারবার UTI হওয়া মানুষের জন্য এখন বায়োলজিক্যাল টেস্টিং এবং ব্যাকটেরিয়াল সিগন্যাল বিশ্লেষণ চলছে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের জন্য ইউরিনের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, যা ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে সীমিত করে।

মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI) ছোট সমস্যা মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যগত বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সচেতনতা, সঠিক হাইজিন, পর্যাপ্ত পানি পান, জীবনধারার পরিবর্তন এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ এই সমস্যার সমাধান। "UTI প্রমাণ করে, শরীরের নীরব সংকেতকেও শুনতে হবে। প্রথম ধাপ হলো সচেতনতা, তারপর প্রতিরোধ।"

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ