আঙুর নাকি আমলকী? দেখুন কোন ফল আপনার শরীরকে দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি শক্তি ও উপকার!

আঙুর নাকি আমলকী? দেখুন কোন ফল আপনার শরীরকে দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি শক্তি ও উপকার!
ছবির ক্যাপশান, আঙুর নাকি আমলকী? দেখুন কোন ফল আপনার শরীরকে দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি শক্তি ও উপকার!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

ফল খাওয়া কেবল স্বাদের জন্য নয়, বরং শরীরের শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। আজকাল বাজারে আঙুর ও আমলকী দুটিই অত্যন্ত জনপ্রিয়, কিন্তু পুষ্টি ও স্বাস্থ্য দিক থেকে কোনটি প্রকৃত অর্থে এগিয়ে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাদের জন্য আঙুর জনপ্রিয় হলেও দৈনন্দিন স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও পুষ্টির দিক থেকে দেশীয় আমলকী বহু গুণে কার্যকর।

বাজারে আঙুর প্রায় সবসময় দামের দিক থেকে উচ্চমূল্যবান এবং বিদেশি আমেজপূর্ণ মনে করা হয়। অসুস্থ কারো জন্য এক কেজি আঙুর উপহার দিলে সেটি সমাজে একটি সম্মানজনক পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু প্রকৃত স্বাস্থ্যগত দিক থেকে মাত্র ১০০ গ্রাম আমলকী শরীরকে যে শক্তি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পুষ্টি যোগ করে, তা আঙুরের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

এটি প্রমাণ করে যে, ফল কেনার ক্ষেত্রে কেবল স্বাদ বা বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা বিবেচনা করা জরুরি।

আঙুর প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৬৯ কিলোক্যালরি শক্তি দেয়। এটি শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগ করে, তবে চিনি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস বা ওজন নিয়ন্ত্রণে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

আমলকীতে ক্যালরি মাত্র ৪৮ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটও কম। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা বা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য আমলকী আদর্শ। প্রোটিন এবং ফ্যাটের দিক থেকেও দুটো ফলই কম, তবে সামান্য বেশি প্রোটিন থাকা মানে আমলকী পুষ্টিগুণে সামান্য এগিয়ে।

আঙুরে প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১৮.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ১৫.৫ গ্রাম চিনি থাকে। ফলে শরীর দ্রুত শক্তি পায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্থিতিশীল হতে পারে। অন্যদিকে, আমলকীতে কার্বোহাইড্রেট মাত্র ১০ গ্রাম, চিনি প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে এটি ডায়াবেটিক এবং সুস্থ জীবনধারার জন্য অনেক নিরাপদ।

ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের বিস্তৃত বিশ্লেষণ-

ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান হল শরীরের সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি।

◑ ভিটামিন সি: আঙুরে মাত্র ৩.২ মিলিগ্রাম, কিন্তু আমলকীতে গড়ে প্রায় ৪৭৮ মিলিগ্রাম। এই উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

◑ ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমলকীতে আঙুরের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি।

◑ ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক। উভয় ফলেই উপস্থিত।

◑ মিনারেলস: আমলকীতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম এবং জিংক থাকে। এটি হাড় মজবুত করতে, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। আঙুরেও পটাশিয়াম এবং ফসফরাস আছে, তবে তুলনায় কম।

উভয় ফলেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা ক্যানসার, প্রদাহ, বয়সজনিত রোগ ও কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। আঙুরে রয়েছে রিসভারাট্রল, যা হৃদয় এবং রক্তনালী রক্ষায় কার্যকর। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস রয়েছে, যা প্রদাহ কমাতে, কোষ পুনর্গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খেলে শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমে।

দৈনন্দিন ব্যবহারে উপযোগিতা-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আমলকী সবচেয়ে কার্যকর। স্বাদ বা উৎসবের জন্য আঙুর আদর্শ, তবে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দৈনন্দিন খাওয়ার জন্য আমলকী সেরা।শিশু ও বৃদ্ধদের জন্যও আমলকীর পুষ্টিগুণ অত্যন্ত সহায়ক।

স্বাদের জন্য আঙুর জনপ্রিয়, কিন্তু পুষ্টি, শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার দিক থেকে দেশীয় আমলকী একেবারেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এক কেজি আঙুরের চেয়ে ১০০ গ্রাম আমলকী শরীরকে বহুগুণ শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ