ফুকুশিমায় যা দেখলেন বিজ্ঞানীরা, তা আপনিও কল্পনা করতে পারবেন না: গাছপালা রেডিয়েশন শোষণ করছে!

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
মানুষের তৈরি পারমাণবিক শক্তি যেমন সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক, তেমনি এর অনিয়ন্ত্রিত ক্ষতি হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ। ২০১১ সালের ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনা তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে রিঅ্যাক্টর বিস্ফোরিত হলে বিপুল পরিমাণ রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, পানিতে, এমনকি মাটিতেও। তখন পুরো বিশ্বজুড়ে একটাই প্রশ্ন ছিল এই ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তা থেকে প্রকৃতি কীভাবে পুনরুদ্ধার করবে? বছরের পর বছর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এক নীরব উদ্ধারকর্তা কাজ করছে ফুকুশিমার মাটিতে গাছপালা। বিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়েছেন এই দেখে যে, বহু উদ্ভিদ রেডিওঅ্যাকটিভ পদার্থ শোষণ করে নিজের ভেতর সঞ্চয় করছে এবং ধীরে ধীরে মাটির তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে।
এই প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানীরা বলেন Phytoremediation অর্থাৎ, উদ্ভিদ দ্বারা পরিবেশ দূষণ পরিশোধনের প্রাকৃতিক পদ্ধতি। কিছু গাছপালা বিশেষভাবে সক্ষম ভারী ধাতু, তেজস্ক্রিয় আয়োডিন, সিজিয়াম বা স্ট্রনটিয়ামের মতো পদার্থ মূলের মাধ্যমে শোষণ করে নিজ দেহে জমা রাখতে।
ফুকুশিমা অঞ্চলে স্থানীয় ঘাস, পাইন গাছ, সূর্যমুখী ও বাঁশজাতীয় কিছু গাছের মধ্যে এই ক্ষমতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে সূর্যমুখী গাছ, যার মূল ও কাণ্ডে তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম ধরে রাখার প্রবণতা আশ্চর্যজনকভাবে বেশি। ফলে রেডিয়েশন মাটির গভীরে না গিয়ে গাছের ভেতরেই আটকে থাকে।
কীভাবে ঘটে এই শোষণ?
গাছের মূল মাটির আয়ন বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় কণাগুলো গ্রহণ করে, যেমনটি করে সাধারণ পুষ্টি উপাদানের ক্ষেত্রে। পার্থক্য হলো এক্ষেত্রে সেই কণাগুলো বিপজ্জনক। তবুও গাছ তার স্বাভাবিক জীবপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো ধরে রাখে, এমনকি কখনও পাতায় বা ফলেও স্থানান্তরিত করে।
যখন সময়ের সঙ্গে সেই গাছপালা শুকিয়ে যায় বা মারা যায়, তখন সেগুলো সংগ্রহ করে নিরাপদে অপসারণ করা যায় যা রেডিয়েশন পরিষ্কারের এক তুলনামূলকভাবে প্রাকৃতিক উপায়। বিজ্ঞানীরা একে বলেন "green decontamination", অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব পরিশোধন।
ফুকুশিমার ক্ষতস্থানে আজও অনেক এলাকা বাসযোগ্য নয়, কিন্তু তবুও প্রকৃতি নিজেকে ধীরে ধীরে পুনর্গঠন করছে। স্থানীয় গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্ঘটনার পর কয়েক বছরের ব্যবধানে গাছপালার বৃদ্ধি ও বীজ ছড়ানোর মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর প্রত্যাবর্তনও ঘটছে।
তবে এটি কোনো দ্রুত সমাধান নয় বরং ধৈর্য, সময় ও সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচালিত এক প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়া।
ফুকুশিমা আমাদের দেখিয়েছে প্রকৃতি কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সে নিজের পথেও পুনর্জীবন খুঁজে নেয়। গাছপালা শুধু অক্সিজেন দেয় না; তারা মাটি, বাতাস ও এমনকি রেডিয়েশনও শুদ্ধ করতে পারে। আজকের বিশ্বে যেখানে পারমাণবিক শক্তি ও বিকিরণ ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে 'সবুজ প্রযুক্তি' হিসেবে উদ্ভিদের এই ক্ষমতা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। গবেষকরা এখন ভাবছেনভবিষ্যতে পারমাণবিক দুর্ঘটনা বা শিল্পাঞ্চল দূষণ মোকাবিলায় গাছপালা হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ ও টেকসই অস্ত্র। ফুকুশিমা শেখায়, প্রকৃতি কখনো পুরোপুরি হার মানে না। মানুষের ভুলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেও এক টুকরো সবুজ জীবন নীরবে লড়ে যায়, মাটি পরিষ্কার করে, বাতাস শুদ্ধ করে, পৃথিবীকে ফের বাঁচাতে চায়। গাছ শুধু ছায়া দেয় না তারা পৃথিবীর গভীর ক্ষতও সারিয়ে তোলে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।