বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি, কিন্তু রাস্তা কি টেকসই? বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রস্তুতি !

বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি, কিন্তু রাস্তা কি টেকসই? বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রস্তুতি !
ছবির ক্যাপশান, বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ি, কিন্তু রাস্তা কি টেকসই? বাংলাদেশের চমকপ্রদ প্রস্তুতি !
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

বাংলাদেশ এখন পরিবহন খাতে বৈদ্যুতিক রূপান্তর (EV transition) নিয়ে বেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তেল, গ্যাসের উপর নির্ভর কমিয়ে আনা, পরিবেশ দূষণ কমানো, ও দীর্ঘমেয়াদে সংগ্রহযোগ্য খরচ হ্রাস—এই তিনটি লক্ষ্য সব মিলিয়ে EV রূপরেখাকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে রাস্তায় আসার সময় বাস্তব চ্যালেঞ্জও কম নয়। নিচে বিশ্লেষণ দেওয়া হলো কোথায় আছি, কি চলছে, আর কি করা দরকার।

বর্তমান অবস্থা:

⇨ নীতি ও কর ছাড় (Duty Incentives): ইলেকট্রিক/হাইব্রিড গাড়ি ও তাদের অংশ-উপাদান আমদানিতে কর ও শুল্ক অনেকাংশে কমানো হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদন উৎসাহিত করার জন্য দামের বোঝা (duty+tax burden) কিছু ক্ষেত্রে প্রায় ৩৩%-এর নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আমদানিকৃত গাড়ির ওপর অনেক বড় আর্থিক চাপ কমায়।

⇨ চার্জিং অবকাঠামো তৈরি: প্রগতিশীল কোম্পানি "Ekhon Charge" দেশের প্রথম পাবলিক EV চার্জিং নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে, এবং সম্প্রতি কুমিল্লায় দ্রুত চার্জিং (fast-charging) স্টেশন চালু হয়েছে সড়কপথে যাত্রী ও ট্রাক চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যায়গায়। CG Runner ও Genex Infrastructure সহ নানা কোম্পানি জাতীয় মহাসড়ক এবং শহর এলাকায় চার্জিং স্টেশন দ্রুত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।

⇨ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা: Electric Motor Vehicle Registration and Operation Guideline 2023, অনুযায়ী ২০৩০-এর মধ্যে ৩০% যানবাহন ইলেকট্রিক হবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। Integrated Energy and Power Masterplan-২০২৩ (IEPMP-23) EV ব্যবহার বাড়িয়ে শিল্প ও পরিবহন খাতে জ্বালানির আমদানির চাপ কমানোর কথা বলছে।

একই সঙ্গে বড় শহরগুলোতে (ঢাকা, চট্টগ্রাম) EV বাস আনয়ন, অভ্যন্তরীণ পরিবহন "সবুজ" করার উদ্যোগ চলছে।

⇨ উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টি: বিদেশি ব্র্যান্ড ও স্থানীয় উদ্যোগকর্তারা EV, বিশেষ করে ই-বাইকের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদনে মনোযোগ দিচ্ছে। নতুন বাজেট ও জাতীয় বোর্ড অব রেভিনিউ (NBR)-র নীতিতে ইলেকট্রিক গাড়ি ও অংশ-উপাদান আমদানিতে কর ছাড় সম্পর্কে শিল্পের দাবি এসেছে।

চ্যালেঞ্জগুলো:

⇨ কল্যাণকর চার্জিং নেটওয়ার্কের অভাব: যদিও কিছু দ্রুত-চার্জিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে, তবে দেশের সব এলাকায় পয়পথেই নয়। গ্রামের এলাকা বা দূরবর্তী সড়কগুলিতে এখনও চার্জিং স্টেশন পাওয়া কঠিন। ব্যবহারকারীদের মধ্যে "Range Anxiety" রয়েছে গাড়ি চার্জ শেষ হয়ে যাবে কি না এই ভয় এখনও অনেকজনের মনে কাজ করে।

⇨ উচ্চ ক্রয়মূল্য ও ব্যাটারি খরচ: EV-গাড়ি ও হাই-পারফর্মেন্স ব্যাটারি এখনও অনেক ক্ষেত্রে দামী। আমদানিতে কর, পরিবহন খরচ, বিনিয়োগ খরচ সব মিলিয়ে শুরুতে বেশি পড়তে হয়। রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস সাপ্লাই চেইন এখনও পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি; যেসব লোক যানবাহন সার্চ সার্ভিসের অভিজ্ঞতা কম, তারাও এই দিকটি নিয়ে চঞ্চল।

⇨ বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রিড সক্ষমতার সমস্যা: মোট ইলেকট্রনিক গাড়ির সংখ্যা বাড়লে বিদ্যুৎ খাওয়ার চাপও বাড়বে। কখনো কখনো ঘনপড়ায়ও বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যা থাকতে পারে। চার্জিং স্টেশনগুলোর জন্য ব্যাকআপ/নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ উৎস ও গ্রিড ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়ন অপরিহার্য।

⇨ জনসচেতনতা ও বাজার গ্রহণযোগ্যতা: অনেক ব্যবহারকারী এখনও EV-এর পার্থক্য, লাভ-ক্ষতি, চার্জিং সুবিধা ইত্যাদি ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা পাননি। গাড়ি ব্র্যান্ড, নিরাপত্তা, পরিধান-ব্যবহার পরীক্ষা ইত্যাদিতে মানুষ সচেতন হতে চায়।

যা করা যেতে পারে:

◑ গ্রিড ও শক্তি সংযুক্তি তৈরি: চার্জিং স্টেশনগুলো যাতে সোলার বা নবায়নযোগ্য শক্তিতে কাজ করতে পারে; পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংযোগ স্থিতিশীল করতে হবে।

◑ ব্যাটারি প্রযুক্তি ও রিসাইক্লিং সিস্টেম: ব্যাটারি ব্যর্থ হলে পরিবেশ ও খরচ দুটোই বড় বিপদ। তাই reciclable ব্যাটারি ও পুনর্ব্যবহার নীতি জরুরি।

◑ মান ও নিরাপত্তা মানদণ্ড গঠন: EV-গাড়ি ও চার্জিং স্টেশনগুলোর জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।

◑ জনসচেতনতা বৃদ্ধি: EV-ব্যবহারকারীদের সুবিধা-ক্ষতির বাস্তব উদাহরণ, চার্জিং ব্যবস্থাপনা, পরিবেশে প্রভাব ইত্যাদি বিষয় প্রচার করা।

বাংলাদেশ ইলেকট্রিক গাড়ির দিকে রূপান্তরের পথে দ্রুত এগোচ্ছে: নীতি তৈরি হয়েছে, কিছু অবকাঠামো গড়ে উঠছে, স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি-নীতি পরিবর্তন হচ্ছে। তবে পুরো "বাজোর পরিবর্তন" ঘটাতে হলে সময়, সম্পদ এবং পরিকল্পনায় ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। যদি এই রূপান্তর সফল হয়, তবে বাংলাদেশ পাবলিক পরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন, ও শিল্প সব খাতে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ