বৈদ্যুতিক তারে বসে শক এড়ানোর গোপন কৌশল কি জানেন?

- Author,
- Role, জাগরণ নিউজ বাংলা
শহর হোক বা গ্রাম! প্রায়ই চোখে পড়ে বৈদ্যুতিক তারের ওপর বসা পাখির সারি। কখনো একসঙ্গে অনেকগুলো, আবার কখনো দু-একটা একা একা। এই সাধারণ দৃশ্যটি কেবল দৃষ্টিনন্দনই নয়, আমাদের কৌতূহলও জাগায়। তবে প্রশ্নগুলোও স্পষ্ট- পাখিরা বারবার তারের ওপর কেন বসে? তাদের শরীরে বৈদ্যুতিক শক কেন লাগে না? এই রহস্যের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক instinct এবং বেঁচে থাকার কৌশল।
বৈদ্যুতিক শকের ব্যাখ্যা-
বিদ্যুৎ একটি কন্ডাক্টরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বৈদ্যুতিক তারের ভেতরে সাধারণত তামার তার থাকে, যা বিদ্যুৎকে সর্বনিম্ন প্রতিবন্ধকতার পথ ধরে দ্রুত প্রবাহিত করতে সাহায্য করে। পাখি যখন তারের ওপর বসে, তখন তার দুটি পা একই কন্ডাক্টরের মধ্যে থাকে। ফলে বিদ্যুতের প্রবাহের কোনো বিকল্প পথ তৈরি হয় না। সহজভাবে বলতে গেলে, বিদ্যুৎ তার শরীর দিয়ে অন্য কোনো জায়গায় যাওয়ার পথ না পেলে শক লাগে না।
তবে বিপদ তৈরি হয় যদি পাখির শরীর একসাথে তার এবং অন্য কোনো কন্ডাক্টরের সংস্পর্শে আসে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি পাখি তারের সাথে সাপোর্টিং খুঁটি বা অন্য ভিন্ন ভোল্টেজের বস্তু স্পর্শ করে, বিদ্যুৎ শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মারাত্মক বিপদ তৈরি করতে পারে।
তারে বসার পেছনের প্রাকৃতিক ও সামাজিক কারণ-
পাখিরা বিজ্ঞানের ভাষা বোঝে না, কিন্তু প্রাকৃতিক instinct এবং বেঁচে থাকার প্রয়োজনের কারণে তারা এই আচরণ করে।যেমন -
১. উষ্ণতা ও তাপ সংরক্ষণ: শীতকালে পাখিরা একসঙ্গে বৈদ্যুতিক তারে বসে। এতে তাদের শরীরের তাপ সংরক্ষিত হয়। একসাথে বসলে শরীরের তাপ একে অপরের মাধ্যমে ভাগ হয়ে শীতকালীন তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
২. শিকারি থেকে নিরাপত্তা: উঁচু এবং সরু তার পাখিদের জন্য নিরাপদ স্থান। মাটির স্তরে শিকারি থেকে সহজে শিকার করা সম্ভব, কিন্তু উঁচুতে বসলে শিকারি পৌঁছানো কঠিন। তাই তারা স্বাভাবিক instinct অনুযায়ী উঁচু জায়গা বেছে নেয়।
৩. খাদ্য খোঁজ ও পরিবেশ পর্যবেক্ষণ: উঁচু স্থান থেকে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করা সহজ। পাখিরা সহজেই পোকামাকড়, বীজ বা ফল খুঁজে পায়। এছাড়া, উঁচু থেকে নজরদারি করলে খাদ্য ও শিকারি দুটোই সনাক্ত করা সম্ভব।
৪. সামাজিক সংযোগ ও মেলামেশা: বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বৈদ্যুতিক তারে বসা পাখিদের জন্য সামাজিক মেলামেশার সুযোগ তৈরি হয়। বিশেষ করে অভিবাসী বা হিজরতকারী পাখিরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ, সতর্কীকরণ এবং মিলনের জন্য তারের ওপর বসে।
৫. নিরাপদ বসার স্থিতি ও শারীরিক সুবিধা: পাখিরা তাদের শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহজ স্থান বেছে নেয়। সরু তারে বসলে পাখির পা এবং টালু (talons) তারকে সহজে ধরে রাখতে পারে, ফলে উঁচুতে বসার সময় পতনের ঝুঁকি কমে।
পাখির শরীর বিদ্যুতের জন্য কন্ডাক্টর নয়। তাদের চামড়া, পালক এবং পা মূলত বিদ্যুতের প্রবাহের জন্য কম সংবেদনশীল এবং উচ্চ প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন। ফলে বিদ্যুতের প্রবাহ সহজভাবে শরীরের মধ্য দিয়ে যায় না।
যদি পাখি দুটি পা একই কন্ডাক্টরের মধ্যে রাখে, বিদ্যুৎ শক সৃষ্টি হয় না। বিপদ তখনই আসে যখন পাখির শরীর একটি তার এবং অন্য কোনো সংযোগকৃত বস্তু একসাথে স্পর্শ করে। এটি মানুষের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যদি বিদ্যুতের সংস্পর্শে থাকেন, শরীর বিদ্যুতের পথ তৈরি করলে বিপদ সৃষ্টি হয়।
মোটকথা, পাখিরা বৈদ্যুতিক তারে বসে কারণ এতে তারা:
◑ শীতকালে উষ্ণতা বজায় রাখতে পারে
◑ শিকারি থেকে নিরাপদ থাকে
◑ চারপাশ থেকে সহজে খাদ্য খুঁজতে পারে
◑ একে অপরের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে
◑ শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে
আর তারা বিদ্যুতের শক খায় না কারণ তাদের শরীর দিয়ে বিদ্যুতের জন্য কোনো বিকল্প পথ তৈরি হয় না। তবে শরীর একসঙ্গে তার এবং অন্য কোনো কন্ডাক্টরের সংস্পর্শে গেলে বিপদ এড়ানো যায় না। সহজভাবে বলতে গেলে, পাখি তারে বসার সময় "নিরাপদ বিদ্যুতের পথ" তৈরি করে। প্রাকৃতিক instinct এবং শারীরিক গঠন মিলিত হয়ে তাদেরকে নিরাপদ রাখে।
আপনার প্রতিক্রিয়া জানান
মন্তব্যসমূহ
এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।