মুখে অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়? এটা কি কোনো রোগের ইঙ্গিত? বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ শুনলে ভাববেন দু'বার!

মুখে অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়? এটা কি কোনো রোগের ইঙ্গিত? বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ শুনলে ভাববেন দু'বার!
ছবির ক্যাপশান, মুখে অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়? এটা কি কোনো রোগের ইঙ্গিত? বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ শুনলে ভাববেন দু'বার!
  • Author,
  • Role, জাগরণ নিউজ বাংলা

গরম আর আর্দ্রতার দেশে আমরা অনেকেই ঘাম নিয়ে ভুগি। একটু হাঁটা, ভিড়ে দাঁড়ানো বা সূর্যের তাপে কয়েক মিনিট কাটালেই মুখভর্তি ঘাম-এ যেন নিত্যসঙ্গী। পোশাক ভিজে যাওয়া, সাজগোজ নষ্ট হওয়া বা অস্বস্তিকর দুর্গন্ধ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অপ্রিয় ও বিব্রতকর। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, এই অতিরিক্ত ঘাম সবসময়ই স্বাভাবিক নয়; এটি হতে পারে শরীরের এক ধরনের বিশেষ শারীরবৃত্তীয় সমস্যা, যার নাম 'হাইপারহাইড্রোসিস' (Hyperhidrosis)।

মানবদেহে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। শরীরের একক্রিন (Eccrine) গ্রন্থি ঘাম উৎপন্ন করে দেহকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু যখন এই গ্রন্থিগুলোর কার্যক্রম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখনই দেখা দেয় অতিরিক্ত ঘাম বা হাইপারহাইড্রোসিস।

বিশেষ করে মুখ ও মাথায় ঘাম হলে তাকে বলা হয় ক্রেনিওফেশিয়াল হাইপারহাইড্রোসিস (Craniofacial Hyperhidrosis)। এতে কোনো শারীরিক পরিশ্রম বা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ ছাড়াই ঘাম বের হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২-৩ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন, এবং এর অনেক ক্ষেত্রেই কারণ পুরোপুরি নির্ধারণ করা যায় না।

চিকিৎসা গবেষণা অনুযায়ী, মুখে অস্বাভাবিক ঘামের পেছনে থাকতে পারে একাধিক কারণ

⇨ বংশগত প্রবণতা: পরিবারের কারও একই সমস্যা থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেও তা দেখা যেতে পারে।

⇨ স্নায়বিক উত্তেজনা: একক্রিন গ্রন্থির স্নায়ুগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হলে ঘাম বেড়ে যায়।

⇨ আবেগ ও মানসিক চাপ: দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা লজ্জা এই আবেগগুলো ঘাম উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।

⇨ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ইনসুলিন, হরমোন বা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধও অতিরিক্ত ঘাম বাড়ায়।

⇨ হরমোনগত পরিবর্তন: বিশেষ করে মেনোপজ বা হরমোন ভারসাম্যহীনতার সময় ঘাম বেড়ে যায়।

⇨ গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া: বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশগত তাপমাত্রাই ঘামগ্রন্থিকে অতিসক্রিয় করে তোলে।

জানুন লক্ষণগুলো: হাইপারহাইড্রোসিস সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু স্থানে প্রভাব ফেলে

◑ মুখমণ্ডল ও মাথার ত্বক

◑ হাতের তালু

◑ পায়ের তলা

◑ বগল

◑ মুখে হলে এটি অনেক সময় চোখের চারপাশ, কপাল, নাকের পাশে ও ঠোঁটের উপরে বেশি দেখা যায়।

চিকিৎসা ও করণীয়:

অতিরিক্ত ঘাম প্রাণঘাতী নয়, তবে এটি আত্মসম্মান ও দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর কিছু কার্যকর সমাধান রয়েছে

☞ অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট ক্রিম বা স্প্রে: অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত ক্রিম ঘামগ্রন্থির স্নায়ুকে সাময়িকভাবে ব্লক করে দেয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের ঘাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

☞ অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ: মুখের ঘাম কমাতে ব্যবহৃত হয় এই ওষুধ, যা স্নায়ুর অতিরিক্ত উত্তেজনা হ্রাস করে। তবে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে।

☞ পাউডার ও হালকা প্রসাধন ব্যবহার: শোষণক্ষম পাউডার মুখের আর্দ্রতা কমায় ও ত্বককে আরাম দেয়। ভারী ক্রিম বা তেলজাতীয় প্রসাধনী এড়িয়ে চলা উচিত।

☞ মানসিক প্রশমন: মেডিটেশন, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ঘাম কমাতে সাহায্য করে।

☞ শেষ উপায় সার্জারি: গুরুতর ক্ষেত্রে স্নায়ু ব্লক বা কেটে ফেলার (Sympathectomy) মাধ্যমে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি স্থায়ী সমাধান হলেও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে করাই শ্রেয়।

কিছু ঘরোয়া উপায়:

◑ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়া ও শুকনো তোয়ালে ব্যবহার করা

◑ প্রচুর পানি পান করা

◑ ক্যাফেইন বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার কমানো

◑ তুলার তৈরি পোশাক পরা

মুখের অতিরিক্ত ঘাম কোনো লজ্জার বিষয় নয় এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাত শারীরবৃত্তীয় অবস্থা। সঠিক কারণ নির্ণয় করে জীবনযাপন ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন আনলেই এই সমস্যাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই পরের বার ঘাম ঝরলে অস্বস্তি নয়, বরং বুঝে নিন আপনার শরীর একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় কাজ করছে, শুধু সেটির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন।

আপনার প্রতিক্রিয়া জানান

❤️
Love
0
(0.00 / 0 total)
👏
Clap
0
(0.00 / 0 total)
🙂
Smile
0
(0.00 / 0 total)
😞
Sad
0
(0.00 / 0 total)

মন্তব্যসমূহ

এই সংবাদের জন্য এখনো কোনো মন্তব্য নেই।


সম্পর্কিত নিউজ