বুধবার (৮ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের টেকসই উত্তরণের কৌশল বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি’র অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় এই কথা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা একসময় ১২.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল, তা কমে বর্তমানে ৮.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এসময় তিনি জানান, দেশে বর্তমানে পাঁচ মাসের আমদানির সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।

তিনি জানান, গত এক-দুই মাসে মূল্যস্ফীতি আরো কমে প্রায় ৭ শতাংশে নামতে পারত, কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দামের সাময়িক বৃদ্ধির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
তবে তিনি আশাবাদি যে, চালের দাম যেভাবে কমতে শুরু করেছে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আরো হ্রাস পাবে।

ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “খেলাপি ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি মূলত পূর্ববর্তী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে ব্যাপক দুর্নীতি ও ব্যাংক লুটের কারণে হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।“
তিনি বলেন, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের কারণেই খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এই খেলাপি ঋণের হার ২৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এসময় আর্থিক খাত পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ড. মনসুর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা জানান। সেগুলো হোলো- 
১. একীভূতকরণ ও বিলুপ্তিঃ দুর্বল আর্থিক ভিত্তি নিয়ে পরিচালিত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত করা হবে এবং নয়টি নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (লিজিং কোম্পানি) ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

২. ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডঃ উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা কার্যক্রম উৎসাহিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৯০০ কোটি টাকার একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড গঠন করা হচ্ছে। এই তহবিলে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত ৬০০ কোটি টাকা প্রদান করবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

৩. ক্যাশলেস লেনদেনঃ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং নগদ অর্থ ব্যবস্থাপনার খরচ কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

সরকারের উপদেষ্টা, সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এই অনুষ্ঠান সভার সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, কৃষি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, ডাক-টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এছাড়া বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) সভাপতি আব্দুল মুকতাদির।

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।